সমীরণ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৭ অক্টোবর: করোনা যুদ্ধের অন্যতম প্রধান সৈনিক, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের স্ত্রী ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ সুরেন্দ্রনাথ বেরা (ডাঃ এস এন বেরা) সম্প্রতি (গত ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২০) করোনা’র কাছে হার মেনে, মাত্র ৩৫ বছর বয়সেই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন! তরুণ এই করোনা যোদ্ধা’র লড়াইকে স্বীকৃতি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মেদিনীপুরের (চৌরঙ্গীর বিদ্যাসাগর শিল্পতালুকে অনুষ্ঠিত) সভা থেকে মঙ্গলবার বললেন, “মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের তরুণ চিকিৎসক নিজের জীবন দিয়ে রোগীদের বাঁচিয়েছেন!” আর তাই, মাত্র ৫ বছর ও ৫ মাসের দুই শিশুপুত্র’কে এই পৃথিবীতে রেখে বিদায় নেওয়া সৎ, নিষ্ঠাবান ও সদাহাস্যময় চিকিৎসক ডাঃ বেরা’র (Dr Surendranath Bera) পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর তাগিদ থেকেই, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর স্ত্রী স্বাতী বেরা (ভৌমিক)’র হাতে সরাসরি চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দিলেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, “করোনা যুদ্ধে তিনি সামনের সারিতে লড়াই করেছেন। তাই, তাঁর অবদানকে স্বীকৃতি দিয়ে আমরা তাঁর স্ত্রী’র হাতে নিয়োগপত্র তুলে দিয়েছি।”
অপরদিকে, হাতির হামলায় নিহত পরিবারের এক সদস্যকে স্পেশাল হোম গার্ড পদে চাকরি দেওয়ার কথাও ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মেদিনীপুরের সভা থেকে এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া সহ জঙ্গলমহল ও উত্তরবঙ্গের কিছু অংশে হাতির হামলায় অনেককে প্রাণ হারাতে হয়! বনদপ্তরের পক্ষ থেকে আড়াই লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় এজন্য। কিন্তু, ক্ষতিগ্রস্ত ওই পরিবারের পাশে দাঁড়াতে আমরা এবার থেকে ওই পরিবারের একজন সদস্যকে স্পেশাল হোম গার্ড পদে চাকরি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” এদিনের সভায়, হাতির হামলায় নিহত এক পরিবারের সদস্যের হাতে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেওয়ার মধ্য দিয়ে এই প্রকল্পের উদ্বোধনও করলেন মুখ্যমন্ত্রী। শুধু তাই নয়, দীর্ঘদিনের দাবি ও বঞ্চনার ইতিহাস’কে স্বীকৃতি দিয়ে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মাওবাদী আমলে প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের একজন সদস্যকেও চাকরি দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেন। সঙ্গে চার লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ। কোনো পরিবারের সদস্য যদি মাওবাদী আক্রমণে নিহত বা খুন হয়ে থাকেন অথবা দশ বছরের বেশি সময় ধরে ‘নিখোঁজ’ থাকেন, তবে সেই পরিবারের একজন সদস্যকে চাকরি ও চার লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন। এদিনের (৬ অক্টোবর) সভা থেকে, মাওবাদী হামলায় নিহত বা মাওবাদীদের হাতে খুন হওয়া এক পরিবারের সদস্যের হাতে চাকরির নিয়োগপত্র ও চার লক্ষ টাকা তুলে দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রকল্পেরও উদ্বোধন করলেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, অতিসম্প্রতি মেদিনীপুর শহরে এই ধরনের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলি একটি সমাবেশের আয়োজন করে, মুখ্যমন্ত্রী তথা রাজ্য সরকারের কাছে এই ধরনের দাবিগুলিই তুলে ধরেছিলেন। দাবি পূরণ না হলে, বৃহত্তর আন্দোলনের হুমকিও দিয়েছিলেন! আপাতত মুখ্যমন্ত্রীর পদক্ষেপে, মাওবাদী আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর ক্ষতে ও ক্ষোভে কিছুটা হলেও প্রলেপ পড়বে বলে মনে করছেন, ওয়াকিবহাল মহল।
‘কল্পতরু’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন যেন দু’হাত ভরে দেওয়ার জন্যই উপহারের ডালি সাজিয়ে এসেছিলেন। জঙ্গলমহলের ৪ হাজার (চার হাজারের কিছু বেশি) জুনিয়র কনস্টেবল’কে এদিন থেকে কনস্টেবল পদে উন্নীত করা হল, মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী। ২০১১ সালে ক্ষমতায় আসার পরই মুখ্যমন্ত্রী এদের নিয়োগ করেছিলেন, জুনিয়র কনস্টেবল পদে। স্বাভাবিকভাবেই প্রমোশন বা উচ্চ পদে উন্নীত হয়ে, খুশি জঙ্গলমহলের (ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও পশ্চিম মেদিনীপুর) এই পুলিশকর্মীরা। এদিনের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী চার জনের হাতে প্রোমোশন লেটার তুলে দিয়ে এই প্রক্রিয়াও শুরু করে দিলেন। এদিনের, সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী ‘পুরোহিত ভাতা’রও সূচনা করে দিয়ে গেলেন। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গোয়ালতোড়ের সর্বমঙ্গলা মন্দিরের প্রধান পুরোহিতের হাতে এই সাম্মানিক ভাতার অর্থ তুলে দিয়ে এই প্রকল্পেরও আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী। এছাড়াও, এদিন তিনি জেলার পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার সহ প্রত্যেক থানার আইসি, ওসিদের কড়া নির্দেশ দেন, দ্রুত ১০ বছরের পুরানো পূজা কমিটিগুলির হাতে ৫০,০০০ টাকা তুলে দিতে হবে; কারণ, তিনি টাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন এবং পুজোও একেবারে সামনে! শালবনী ব্লকের কর্ণগড় মন্দির সংস্কারের জন্যও এদিন তিনি ১ কোটি টাকা তুলে দিয়েছেন জেলা প্রশাসনের হাতে। বিধায়ক, কর্মাধ্যক্ষ, প্রেস মিডিয়া (পশ্চিম মেদিনীপুর প্রেস ক্লাব) কিংবা লোধা শবর সম্প্রদায়, ‘কল্পতরু মমতা‘র কাছে এদিন যে যা চেয়েছেন, তাঁর কৃপাদৃষ্টি থেকে বঞ্চিত হননি! বরং, না চাইতেও অনেকে অনেক কিছু পেয়েছেন। যদিও এ নিয়ে বিরোধীদের বিশ্লেষণ, সামনেই পৌরসভা এবং তারপরই বিধানসভা। জঙ্গলমহলের ভোট ব্যাঙ্ক ফিরিয়ে আনতেই দু’হাত ভরে দিদি শুধু দিয়ে গেলেন!
