মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১৯ সেপ্টেম্বর: দশ দিনের লড়াই শেষে, জেলার শীর্ষস্থানীয় ‘করোনা যোদ্ধা’ তথা মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডাঃ পঞ্চানন কুন্ডু (৫৯) আজ (শনিবার), মেদিনীপুর শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত ‘আয়ুশ কোভিড হাসপাতাল’ (লেভেল ৩) থেকে ‘করোনা মুক্ত’ হয়ে ফিরলেন। করোনা যুদ্ধে’র একেবারে প্রথম সারির যোদ্ধা হিসেবে এতদিন লড়াই করে গেছেন, জেলার কোভিড টাস্ক ফোর্সের অন্যতম সদস্য ডাঃ কুন্ডু। এবার, ‘করোনা জয়’ করে নতুন এক অভিজ্ঞতারও সাক্ষী হলেন এই ফ্রন্টলাইন কোভিড ওয়ারিয়র। তাঁকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, জেলাশাসক ডঃ রশ্মি কমল, মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ নিমাই চন্দ্র মন্ডল, উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (১) ডাঃ সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী সহ জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিকারিক বৃন্দ। উচ্ছ্বসিত, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের সকল চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বাস্থ্য পরিষেবার সাথে যুক্ত কর্মীরা। আপাতত কয়েকদিন গৃহ নিভৃতবাসে থাকবেন বলেই জানিয়েছেন, ডাঃ কুন্ডু। দিন সাতেক পরে, পুনরায় কোভিড যুদ্ধে তথা স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানের লড়াইতে ঝাঁপিয়ে পড়বেন বলেও জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত ৭ সেপ্টেম্বর করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল, অধ্যক্ষ ডাঃ পঞ্চানন কুন্ডু’র গাড়ির চালকের। ৮ সেপ্টেম্বর অধ্যক্ষ নিজের করোনা পরীক্ষা করিয়েছিলেন, রিপোর্ট পজিটিভ আসে। ৯ সেপ্টেম্বর, বুধবার থেকে তিনি মেদিনীপুর শহরের উপকণ্ঠে (খাসজঙ্গল এলাকায়), অবস্থিত লেভেল ৩ করোনা হাসপাতাল আয়ুশে ভর্তি হয়েছিলেন, স্বল্প উপসর্গ (Mild Symptoms) নিয়ে। তারপর, টানা দশদিনের লড়াই শেষে আজ (শনিবার), তিনি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন। উল্লেখ্য, গতকাল (শুক্রবার) রাতে তাঁর রিপোর্ট ‘নেগেটিভ’ আসে। ডাঃ কুন্ডু জানিয়েছেন, “এই ভাইরাসের আক্রমণে প্রথমে উপসর্গ বোঝা যায় না, তবে, উপসর্গহীন বা স্বল্প উপসর্গ যুক্ত অবস্থাতেই ধরা পড়লে এবং চিকিৎসা শুরু হলে, দ্রুত সুস্থ হওয়া যায়। অবস্থা আয়ত্বের বাইরে চলে গেলে, অনেক সময়ই দুর্ঘটনা ঘটে যায়! আমার অল্প উপসর্গ ছিল, হালকা জ্বর প্রভৃতি। আয়ুশের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী’দের আন্তরিক পরিষেবায় দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠতে পেরেছি, সেজন্য ঈশ্বর এবং সকলকে ধন্যবাদ জানাই। আমার পরিবারের সকল সদস্যের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। এই কঠিন সময় যাঁরা পাশে ছিলেন, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি।”
এদিকে, গত ১৪ সেপ্টেম্বর শালবনী করোনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা, গোয়ালতোড়ের কাদাড়িয়া গ্রামের প্রসূতি (২৪) মায়ের সদ্যজাত সন্তান তথা ৫ দিনের শিশুকন্যা’র রিপোর্ট পজিটিভ এসেছিল। গত, ৮ সেপ্টেম্বর আসন্নপ্রসবা ওই প্রসূতি করোনা সংক্রমিত হয়ে, শালবনী করোনা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এরপর, তিনি সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসব করলেও, ১ দিনের শিশুকন্যার লালারসের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হলে, রিপোর্ট পজেটিভ আসে গত ১৪ সেপ্টেম্বর। যদিও, মা ও মেয়ে দু’জনই উপসর্গহীন এবং সম্পূর্ণ সুস্থ ছিলেন। এরপর, আরো চারদিন চিকিৎসাধীন থাকার পর, গতকাল রাতে, মা ও শিশুকন্যা দু’জনের রিপোর্টই নেগেটিভ এসেছে বলে জানা যায় জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে। হাসপাতালের সুপার ডাঃ নবকুমার দাস জানিয়েছেন, “দু’জনই সম্পূর্ণ সুস্থ ও করোনা মুক্ত। হাসপাতালের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা জানাই, ওনাদের জানাই অভিনন্দন।”