মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম, ৯ অক্টোবর: ‘কোভিড পজিটিভ’ (Covid 19 Positive) শোনার সাথে সাথেই শালবনী (Salboni) ব্লকের পিড়াকাটা’র এক অশীতিপর প্রৌঢ়ের মৃত্যু হল ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে (Jhargram Super Speciality Hospital) আজ (৯ অক্টোবর), সকালে ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে ওই প্রৌঢ়’কে ভর্তি করার জন্য নিয়ে আসেন, ঝাড়গ্রাম শহরের বাসিন্দা তাঁর স্বাস্থ্যকর্মী (এএনএম) মেয়ে ও জামাই। কয়েকদিন জ্বর থাকায় এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে হাসপাতালের নিয়ম অনুযায়ী, ওই প্রৌঢ়ের র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হয়! স্বাভাবিকভাবেই তিনি নিজেও রিপোর্টের কথা জানতে পারেন। ‘করোনা পজিটিভ’ রিপোর্ট শোনার মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যেই, হার্ট ফেল বা হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়! পরিজনেরা জানালেন, হার্টের বিশেষ কোন সমস্যা ছিল না। কয়েকদিন ধরে জ্বর হওয়ায় শারীরিক দুর্বলতা ছিল এবং তার সাথে করোনা’র খবর শুনেই ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন, তারই ফলশ্রুতিতে মৃত্যু!
শালবনী ব্লকের পিড়াকাটায় বাড়ি শশধর ঘোষ (৯৩) এর। স্ত্রী’কে নিয়েই থাকতেন। তিন কন্যার বিয়ে হয়ে গেছে। শারীরিকভাবে সুস্থই ছিলেন। লকডাউনের পর থেকে বাড়ি থেকে বিশেষ বেরোতেনও না। গত কয়েকদিন ধরে জ্বর ভুগছিলেন, তবে বাড়াবাড়ি কিছু হয়নি। গতকাল রাত থেকে পেটের সমস্যা দেখা দেওয়ায় (লুজ মোশন বা পাতলা পায়খানা) দুর্বল হয়ে পড়েন। এরপরই, পেশায় স্বাস্থ্যকর্মী তাঁর ছোটো মেয়ে এবং জামাই, আজ (৯ অক্টোবর) সকালে গাড়ি নিয়ে ঝাড়গ্রাম থেকে পিড়াকাটায় আসেন, বাবাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তাঁর ছোটো মেয়ে নিজে ঝাড়গ্রামের স্বাস্থ্যকর্মী তথা করোনা যোদ্ধা হওয়ায়, বাবাকে ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে (ঝাড়গ্রাম সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে) ভর্তি করার সিদ্ধান্ত নেন। বেলা ১২ টা নাগাদ ভর্তি করার আগে, করোনা পরীক্ষা করা হয় তাঁর। কিছুক্ষণের মধ্যেই রিপোর্ট জানা যায়, ‘পজিটিভ’! আর, এ কথা শোনার পরই হার্ট ফেইলিওর করে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন শশধর বাবু। এই ঘটনায় শোকস্তব্ধ তাঁর পরিজনেরা! শশধর বাবু’র মেজ জামাই জানান, “শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে যাওয়ায় আমার ছোট শ্যালিকা ওনাকে আজকেই ঝাড়গ্রামে নিয়ে আসে, নিজে খোঁজখবর রাখতে পারবে বলে। নিয়মমতো কোভিড টেস্ট হয়। এই আঘাতটা হয়তো সহ্য করতে পারলেন না! ওনার বয়স হয়েছিল ঠিকই, তবে বিশেষ শারীরিক সমস্যা ছিল না। হার্টের সামান্য সমস্যা ছিল, তবে সেটা বড় কিছু নয়, কারণ এই বয়সে হার্নিয়া সহ দু’দুটি সার্জারি হয়েছে ওনার। জ্বর আর কাল রাত থেকে লুজ মোশন হওয়ায়, একটু দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। এদিকে, পিড়াকাটা গ্রামের করোনা পরিস্থিতিও প্রথম থেকেই নিয়ন্ত্রণে! তাই, কিভাবে করোনা সংক্রমিত হলেন, সেটাও আমরা বুঝতে পারছি না!” তবে, চিকিৎসকদের মতে, বেশ কয়েকদিন ধরে জ্বর সহ কো-মর্বিডিটি এবং তারপর করোনা সংক্রমণের কারণেই, শ্বাসযন্ত্র বিকল হয় এবং তারপরই কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বা হার্ট অ্যাটাক হয়। আপাততো, তাঁর তিন মেয়ে, জামাই সহ নাতি-নাতনিরা শেষ দেখার জন্য ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালেই আছেন। এরপরই, সরকারি নিয়মে তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে। আগামীকাল, প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে থাকা তাঁর ছোটো মেয়ে ও জামাইয়ের করোনা পরীক্ষাও করা হবে বলে জানা যায়।