মণিরাজ ঘোষ, মেদিনীপুর ও খড়্গপুর, ২৯ সেপ্টেম্বর : মেদিনীপুর ও খড়্গপুরকে সড়কপথে সংযুক্ত করেছে কংসাবতী নদীর উপর নির্মিত কংসাবতী সেতু (দেশপ্রাণ বীরেন্দ্র শাসমল সেতু)। সেতুটি তৈরি হয় ১৯৭২ সালে। সেতুর উপর দিয়ে গিয়েছে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক। সেতুটি ৪৩৫ মিটার লম্বা, ৯ মিটার চওড়া। সেতু দিয়ে গড়ে প্রতিদিন কয়েক হাজার যানবাহন চলাচল করে। অবিভক্ত মেদিনীপুরের গর্ব (স্বদেশপ্রেমিক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী) ‘দেশপ্রাণ’ বীরেন্দ্র শাসমলের নামাঙ্কিত এই কাঁসাই ব্রিজ বা কংসাবতী সেতু দীর্ঘ সময় ধরে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়েছিল। মাঝেমধ্যে, সংস্কার (বা, তাপ্পিমারা কাজ) করা হলেও, কয়েক দশক সম্পূর্ণরূপে (পূর্ণাঙ্গ) সংস্কারের কাজ হয়নি। ফলে, সেতু বিপর্যয়ের আশঙ্কায় ছিলেন অবিভক্ত মেদিনীপুরের মানুষ। গত জুলাই মাসে (২০২০), দ্য বেঙ্গল পোস্ট (The Bengal Post.in)’কে সুখবর দিয়েছিলেন জেলার পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষ এবং জাতীয় সড়কের ডিভিশন ২ (NH DIV. 2) এর ইঞ্জিনিয়ার তরুণ চক্রবর্তী। দ্য বেঙ্গল পোস্ট ডট ইনে গত ১৭ ই জুলাই (২০২০) এই সম্পর্কিত খবরটি প্রকাশিত হয়েছিল। অবশেষে, আজ (২৯ সেপ্টেম্বর), অবিভক্ত মেদিনীপুরের ‘বীরাঙ্গনা’ মাতঙ্গিনী হাজরা’র ৭৯ তম আত্মবলিদান (এই দিনটিতেই, অবিভক্ত মেদিনীপুরের তমলুক থানার সামনে ব্রিটিশ পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়েছিলেন মাতঙ্গিনী হাজরা) দিবসেই শুভ কার্যের সূচনা হল। প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যায়ে এই কাজ হবে। পুজোর আগেই সম্পূর্ণ নতুনভাবে সেজে উঠবে জরাজীর্ণ কংসাবতী সেতু বা বীরেন্দ্র শাসমল সেতু।
জাতীয় সড়কের ডিভিশন টু (NH DIV. 2) বর্তমানে এই সেতুটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করা হয় বা যৌথভাবে দেখভাল করা হয়। সেই সূত্রে, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের পূর্ত দপ্তর বিভিন্ন সময়ে, মোহনপুরে (খড়্গপুর গ্রামীণের অন্তর্গত) অবস্থিত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই সেতুটির সংস্কারের বিষয়ে তদারকি করেছে। তবে, জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের তরফ থেকেই Project তৈরি থেকে আর্থিক অনুমোদন সবকিছু করা হয়। গত, জুলাই মাসে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে সুখবর দেওয়া হয়েছিল জেলা পরিষদের পূর্ত দপ্তর’কে। সেই সময় পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষ দ্য বেঙ্গল পোস্ট’কে একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, পুজোর আগেই সেতুটি সম্পূর্ণরূপে সংস্কার করবে NH Division-2। জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে পূর্ণ সহযোগিতা করা হবে। আজ সেতু’র কাজ শুরু হয়েছে। NH Division-2 এর বর্তমান, দায়িত্বপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার প্রলয় চক্রবর্তী জানালেন, “সেতুর কাজ শুরু হয়েছে। সুপার স্ট্রাকচারের কাজ হবে। গার্ডার, বিয়ারিং, ওয়ারিং কোর্ট, জয়েন্ট রেপ্লেসমেন্ট সমস্ত কাজগুলিই হবে। একইসাথে, সেতুর দুই পাশের রাস্তা এবং রং করার কাজও হবে।” জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষ জানিয়েছেন, “আমরা খবর নিয়েছি, পুজোর আগেই নতুনরূপে সেজে উঠবে বীরেন্দ্র শাসমল সেতু।” জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে, প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকা ব্যয়ে পুজোর আগে সেজে উঠবে অবিভক্ত মেদিনীপুরের ঐতিহ্য মন্ডিত এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এই সেতু। কংসাবতীর দুই পারের বাসিন্দা তাই শারদীয়ার প্রাক লগ্নে গেয়ে উঠছেন- “জীর্ণ পুরাতন যাক ভেসে যাক….।”