মণিরাজ ঘোষ, মেদিনীপুর, ১৩ সেপ্টেম্বর : জল বেড়েছে কংসাবতীতে। তার সঙ্গে নদীর দু’কূল ছাপিয়ে এখন উপচে পড়ছে করোনাও। ওই কূলে খড়্গপুর, প্রথম থেকেই করোনা সংক্রমণে ধারাবাহিক। শনিবারের রিপোর্টেও কোয়ার্টার সেঞ্চুরি (২৬ জন) করে ফেলেছে। করোনা’র স্রোত কিছুটা স্তিমিত ছিল, নদীর এই কূল মেদিনীপুরে। তবে, গত একমাসে করোনা স্রোতে রীতিমতো ভাসছে মেদিনীপুর। প্রথম ১৫ দিন গড়ে ১৫ থেকে ২৫ জন করে আক্রান্ত হলেও, শেষ দু’সপ্তাহে রীতিমতো চালিয়ে খেলছে জেলা সদর মেদিনীপুর। কখনো কখনো ছাপিয়ে যাচ্ছে রেলশহর খড়্গপুর’কেও! গত ২৯ শে আগস্ট রেকর্ড ৬০ জন সংক্রমণের পর, প্রতিদিনই গড়ে ৩০-৪০ জন করে সংক্রমিত হচ্ছেন। যদিও, সংক্রমিত’দের অধিকাংশই উপসর্গহীন বা Asymptomatic, তা সত্বেও কিছু কিছু স্বল্প উপসর্গযুক্ত বা Mild Symptomatic এবং আশঙ্কাজনক বা Critical রা চিন্তায় ফেলেছেন এবং ফেলছেন। গত একমাসে শুধুমাত্র মেদিনীপুর শহর ও শহরতলীতে মোট সংক্রমণ এক হাজার ছাড়িয়ে গেছে এবং করোনায় মৃত্যু নিঃশব্দে ১০ পেরিয়ে ১৫’র দিকে! গতকাল, অর্থাৎ শনিবার (১২ সেপ্টেম্বর) রাতে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের রিপোর্ট অনুযায়ী পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ১৫৪ জন এবং একদিনে মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের! এর মধ্যে মেদিনীপুর শহর ও শহরতলীতে করোনা সংক্রমিত ৫৪ জন। অপরদিকে, গত শুক্রবার (১১ সেপ্টেম্বর) কলকাতায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে, জেলা কালেক্টরেটের এক আধিকারিকের। জেলা পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দফতরের কর্মরত ওই আধিকারিকের নাম পার্বতীশঙ্কর বন্দোপাধ্যায় (৫৯)। তাঁর ফুসফুসের সংক্রমণ থাকায়, প্রথম থেকেই তাঁকে কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখানেই শুক্রবার গভীর রাতে তাঁর মৃত্যু। ইতিমধ্যে, জেলা কালেক্টরেটের আরো ৪-৫ জন কর্মী ও আধিকারিক করোনা সংক্রামিত হলেও, এই প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটলো! স্বাভাবিকভাবেই অনেক কর্মীরা উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন। জেলাশাসকের দপ্তরের আধিকারিক জানিয়েছেন, “কাজ তো চালিয়ে যেতেই হবে। প্রত্যেককেই অনুরোধ করবো, স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং দূরত্ব বজায় রেখে কাজ করতে।”
এদিকে, স্বাস্থ্য দফতরের র্যাপিড অ্যন্টিজেন ও আরটি-পিসিআরের রিপোর্ট অনুযায়ী, শনিবার মেদিনীপুর শহরে সংক্রমিত হয়েছেন ৫২ জন। এই তালিকায় ফের পরিবার সংক্রমনের ধারা অব্যাহত আছে! ধর্মা ও রাঙামাটি এলাকায় বিভিন্ন পরিবার থেকে ধারাবাহিকভাবে সংক্রমিত হওয়ায়, গোষ্ঠী সংক্রমণের আশঙ্কাও করা হচ্ছে! শহরের তাঁতিগেড়িয়ার টাউন কলোনীতে একই পরিবারের ৩ জনের (৭৪ বছরের প্রৌঢ়, ৫০ বছর বয়সী ব্যক্তি এবং ৪৫ বছর বয়সী মহিলা ) করোনা রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে বলে জানা যায় স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে। শহরের রাজাবাজারে একই পরিবারের ২ জন মহিলার (৪৭ ও ২২) করোনা রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। ধর্মা সংলগ্ন এলাকায় একটি পরিবারের ৩ জন (স্বামী, স্ত্রী ও সন্তান) ছাড়াও, আরো ২ জন ওই এলাকায় করোনা সংক্রমিত হয়েছেন। কোতবাজার, ক্ষুদিরামনগর, রবীন্দ্রনগর এলাকায় তিনটি পরিবার থেকে ২ জন করে মোট ৬ জন সংক্রমিত হয়েছেন। এছাড়াও, রাঙামাটিতে ২ জন নতুন করে করোনা সংক্রমিত হয়েছেন। হাতারমাঠে এক প্রৌঢ়া (৫২) করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা যায়। হবিবপুরে এক মহিলা’র (৪৮) কোভিড রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। বরিশালকলোনীর এক মহিলার (৩২) শরীরেও পাওয়া গেছে করোনা ভাইরাসের জীবাণু। শহরের মির্জাবাজার (যুবক-২৫) ও পাটনাবাজারেও (যুবতী-২৮) ফের করোনা সংক্রমিতের সন্ধান পাওয়া গেছে। এদিকে, জজকোর্ট সংলগ্ন এলাকায় এক যুবকের (২৪) করোনা রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। অপরদিকে, জজকোর্ট সংলগ্ন কামারপাড়া এলাকায় একসঙ্গে একই পরিবারের ৪ জনের (প্রৌঢ় ৫৯, প্রৌঢ়া ৫৩, শিশু ৪, কিশোরী ৭) করোনা রিপোর্ট একসঙ্গে পজিটিভ এসেছে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে। নজরগঞ্জ ও বিদ্যাসাগরপল্লী এলাকায় ২ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা যায়।পাঠানমহল্লায় একই পরিবারের ২ জন এবং ডাকবাংলো রোডে এক যুবকের করোনা রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে শনিবার। এছাড়াও, মেদিনীপুর সদর ব্লকের চাঁদড়ার দেপাড়া ও চিলগোড়া সহ বিভিন্ন এলাকায় মোট ৯ জনের করোনা রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে।
এদিকে, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষের গাড়ির চালক, মৃত কার্তিক চন্দ্র প্যাটেলের পরিবারের সকলের করোনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। মেডিক্যাল কলেজের আরটি-পিসিআর রিপোর্ট অনুযায়ী ওই পরিবারের ৪ জন এবং সংস্পর্শে থাকা আর একটি পরিবারের ২ জন সহ হোমিওপ্যাথি কলেজ রোড সংলগ্ন এলাকায় মোক ৬ জনের করোনা রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে শনিবার। এছাড়াও, তোড়াপাড়ার সুকুমার সেনগুপ্তপল্লী এলাকার ১ জন, ছোটোবাজারের ১জন, বরিশালকলোনীতে ১ জন, বিধাননগরের ১ জন ও কর্ণেলগোলার ১জন সহ শহরের মোট ১১ জনের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে, আরটি-পিসিআর টেস্ট অনুযায়ী, এমনটাই জানা যায় জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে। সবমিলিয়ে, মেদিনীপুর শহর ও শহরতলীতে এদিন করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা দ্বিতীয়বারের মতো (২৯ আগস্টের পর) ‘হাফ সেঞ্চুরি’ পূর্ণ (৫৪) করেছে।