মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১০ সেপ্টেম্বর : মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের স্ত্রী ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ সুরেন্দ্রনাথ বেরা (ডাঃ এস. এন. বেরা) মাত্র ৩৫ বছর বয়সেই জীবন-যুদ্ধে হেরে গেলেন! করোনা যুদ্ধের একেবারে প্রথম সারির যোদ্ধা হয়েও অদৃশ্য শত্রু ‘করোনা’র কাছে হার মানলেন, মেদিনীপুর শহর তথা জেলার এই স্বনামধন্য চিকিৎসক। বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার এই মর্মান্তিক খবরে, শোকের ছায়া নেমে এসেছে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ এবং সারা মেদিনীপুরের চিকিৎসক মহলে! সকলের প্রিয় সুরেন ডাক্তার বাবু’র এই অকাল প্রয়াণ মেনে নিতে পারছেন না কেউই! পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পিংলার ভূমিপুত্র ডাঃ সুরেন্দ্রনাথ বেরা’র মৃত্যুর খবরে শোকস্তব্ধ সারা এলাকা! পিংলার একটি সংবাদ প্রদানকারী সামাজিক গণমাধ্যম শোক প্রকাশ করে জানিয়েছে, “ডক্টর এস. এন. বেরা মহাশয় করোনা আক্রান্ত হয়ে পরলোকগমন করেছেন ….আমাদের সকলের কাছে খুবই দুঃখের খবর! ১০ নম্বর অঞ্চল গোকুলচক, জলচক বাজার সর্বজনীন দুর্গোৎসব কমিটির স্থায়ী সদস্যও ছিলেন। আমাদের অঞ্চলের সর্বপ্রথম একজন এমবিবিএস ডাক্তার ছিলেন। আমাদের এলাকার অপূরণীয় ক্ষতি! সত্যিই আমরা গভীরভাবে মর্মাহত!”

গত ৩ রা সেপ্টেম্বর, করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসার পরই ডাঃ বেরা কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে (বর্তমানে, একেবারে প্রথমসারির বেসরকারি করোনা হাসপাতাল) ভর্তি হন। প্রবল শ্বাসকষ্ট থাকায়, তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়। মেদিনীপুর শহরে তাঁর ঘনিষ্ঠ এক চিকিৎসক জানালেন, গত দু’দিন কিছুটা সুস্থ হওয়ায় তাঁকে ভেন্টিলেশন থেকে আইসিইউ-তে দেওয়া হয়েছিল বলে শুনেছি। তারপর বুধবার সকাল থেকে ফের বাড়াবাড়ি হওয়ায় ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়। শুনেছি, তাঁর হার্ট অ্যাটাক বা কার্ডিয়াক অ্যাটাক হয় এবং ধীরে ধীরে সেপটিসেমিয়া এবং মাল্টি অর্গান ফেলিওর! বিকেলের দিকেই সব যুদ্ধ শেষ।” ওই ডাক্তার বাবু সহ মেদিনীপুরের চিকিৎসক মহলের অন্যান্য প্রায় সকলেই জানালেন, ডাঃ বেরা’র কোনো কো-মর্বিডিটি ছিল না! খোলামেলা, কাজ প্রিয় এই তরুণ স্বাস্থ্য যোদ্ধা একেবারে সুস্থ সবল ছিলেন, এমনটাই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রত্যেকে। সেই মানুষটির এভাবে মৃত্যু, কেউই যেন মেনে নিতে পারছেন না! মেদিনীপুর শহরের অজাতশত্রু এবং দক্ষ এই স্ত্রী ও প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞের প্রয়াণে মর্মাহত মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক, জুনিয়র চিকিৎসক থেকে শুরু করে স্বাস্থ্যকর্মীরা। অনেকেই বলছেন, করোনার করাল ছায়া যেন, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ’কে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলেছে। চালকের মৃত্যুর পর স্বয়ং অধ্যক্ষ ডাঃ পঞ্চানন কুন্ডু‘ও সংক্রমিত হয়ে চিকিৎসাধীন। একাধিক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত হয়েছেন। এখনো অনেকেই হোম আইসোলেশন কিংবা করোনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। সেই সময়ে, মর্মান্তিক এই খবর সকলকে যে গভীর শোকের সাগরে ডুবিয়ে দিল, তা বলাই বাহুল্য! স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তান (৫ বছর ও ১ বছরের দুই পুত্র)’কে রেখে, করোনা যুদ্ধের প্রথমসারির এই যোদ্ধা করোনা-শত্রুর কাছে হেরে গিয়ে যেন প্রতিটি মানুষকে আরো সচেতন হওয়ার বার্তা দিয়ে গেলেন!

মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের একজন হাউস স্টাফ ডাঃ জয়দীপ জানা, শোক প্রকাশ করতে গিয়ে, স্মৃতি রোমন্থন করেছেন এভাবে, ” একবছরের ইন্টার্নশিপের মধ্যে সব থেকে প্রিয় ছিল ২ মাসের গাইনি পোস্টিং। সব থেকে কাছের প্রিয় তিন দিদি ছাড়াও, আরো একটা মানুষ খুব আপন ছিল! সেই মানুষটা ডিপার্টমেন্টে ঢুকলে সবাই নড়ে চড়ে বসতো । এতটাই প্রাণোচ্ছ্বল, খোশমেজাজি ও চনমনে ছিল মানুষটা। পিজিটি’র দিদি’রা থেকে শুরু করে আমরা, সিস্টার দিদি’রা, ওয়ার্ডবয় সকলের ঘুম উড়ে যেত, সেই মানুষটার বিদ্যুৎ গতিতে কাজ করার জন্য। সেই মানুষটাই আজ কাউকে কোনো রকম রেয়াত না করেই ছেড়ে চলে গেলো অনেক অনেক দূরে। তোমাকে খুব মিস করবো সুরেন দা। খুব অল্প দিনেই চলে গেলে তুমি। যেখানেই থেকো, খুব খুব ভালো থেকো।”
***আরো পড়ুন: মেদিনীপুর শহর ও শহরতলী সহ জেলার সর্বত্র সংক্রমণ…..







