দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, সমীরণ ঘোষ, ২১ ফেব্রুয়ারি : “খেলা হবে”! একুশের যুদ্ধে এই শ্লোগানই এখন মাঠে-ময়দানে ঘুরছে বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতাদের মুখে মুখে। যদি সত্যিই গণতন্ত্রের এই যুদ্ধ বা নির্বাচনী লড়াই কে ‘খেলা’ হিসেবেই ধরে নেওয়া যায়, তবে সেই খেলায় এবার একেবারে ‘মুখোমুখি’ কাঁথির “শান্তিকুঞ্জ” আর দক্ষিণ কলকাতার “শান্তিনিকেতন”! ১৯ শে ডিসেম্বর ‘দল-বদল’ করেছিলেন, প্রাক্তন পরিবহনমন্ত্রী তথা অবিভক্ত মেদিনীপুরের জননেতা শুভেন্দু অধিকারী। প্রথম দিনই মেদিনীপুরের ঐতিহাসিক কলেজ কলেজিয়েট ময়দান থেকে আওয়াজ তুলেছিলেন- “তোলাবাজ ভাইপো হঠাও”। ছেড়ে কথা বলেননি তৃণমূলের যুব সভাপতি তথা ডায়মন্ডহারবারের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়! বলেছিলেন, সবথেকে বড় ‘তোলাবাজ’ তো শুভেন্দুই; টিভির পর্দায় (নারদা) তাঁকেই ঘুষ নিতে দেখা গেছে। আর এও চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন, তাঁর (অভিষেকের) বিরুদ্ধে তোলাবাজির প্রমাণ দিতে পারলে, নিজেই ‘ফাঁসি’ নেবেন! এরপরই, রীতিমতো তথ্য প্রমাণ জোগাড় করে, তা বাঁধিয়ে ময়দানে নেমে (পড়ুন, মঞ্চে উঠছিলেন) পড়েছিলেন ‘শান্তিকুঞ্জে’র মেজ সন্তান শুভেন্দু। গত ২ রা ফেব্রুয়ারি বারুইপুরের সভা মঞ্চ থেকে একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের স্ট্যাটমেন্ট (নকল বা প্রত্যয়িত) দেখিয়ে বলেছিলেন, এটাই হল “ম্যাডাম নারুলা” (Naroola) র সেই থাইল্যান্ডের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের তথ্য, যেখানে প্রতি মাসে ভারতীয় অর্থে ৩৬ লক্ষ টাকা করে জমা পড়ে! এই তথ্য তিনি মৌখিক ভাবে জানিয়েছিলেন, ২৫ শে জানুয়ারি তমলুকের সভায়, আর তথ্য-প্রমাণ (শুভেন্দু অধিকারী’র বক্তব্য অনুযায়ী) দেখিয়েছিলেন, ঠিক এক সপ্তাহ পর বারুইপুরের সভায়। আজ (২১ ফেব্রুয়ারি) যখন সিবিআই (CBI) এর পাঠানো সমন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং তাঁর টুইটার অ্যাকাউন্টে পোস্ট করলেন, তাতে দেখা গেল, সিবিআই যাঁকে উদ্দেশ্য করে এই সমন বা নোটিশ (Notice, Under Section 160 Cr.P.C) পাঠিয়েছে, তাঁর নাম- শ্রীমতী রুজিরা ব্যানার্জি @ নারুলা (Smt. Rujira Banerjee @ Naroola)। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, আপাতত শুভেন্দু অধিকারী’র ঘোষিত “নারুলা” নামটির মধ্যে সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়, সিবিআই এর নোটিশ অনুযায়ী!


যদিও, “শান্তিনিকেতন” এ সিবিআই পাঠানোর বিষয়টিকে সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও বিরোধীদল বিজেপির ‘চক্রান্ত’ বলেই মনে করছে, রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল। সৌগত রায়, পার্থ চট্টোপাধ্যায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে কুণাল ঘোষ একযোগে সকলেই বলেছেন, এটা যে বিজেপি করবে তা জানাই ছিল! একধাপ উঠে ফিরহাদ ববি হাকিম আক্রমণ করে বলেছেন, “বাপের ব্যাটা হলে বিজেপি সামনাসামনি রাজনৈতিক মোকাবিলা করুক। এভাবে, বাড়ির মা-বোনেদের হেনস্থা করা কাপুরুষত্বের পরিচয়।” আর স্বয়ং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, সিবিআইয়ের নোটিশটি পোস্ট করার সাথে সাথে তার ওপরে লেখেন, “আমর স্ত্রীকে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। তবে, ওরা যদি মনে করে, এভাবে ভয় দেখাবে, তাহলে ভুল করছে। আমরা কখনও মাথা নত করিনি।” আর বিধানসভা নির্বাচনের আগে গ্রুপ লিগের প্রথম রাজনৈতিক ‘খেলা’য় জিতে যাওয়া শুভেন্দু অধিকারী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়’কে সঙ্গে নিয়ে আসানসোল থেকে বললেন, “আমরা তো আগেই বলেছিলাম! শুধু এটুকুই বলব এখনই যেন ফাঁসি না নেন। এখনও অনেক কিছু দেখা বাকি আছে।” অন্যদিকে, বিভিন্ন সূত্রে এও জানা গেছে, সিবিআই নোটিশ পাঠিয়েছে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের শ্যালিকাকেও! এসব দেখে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ অবশ্য বলছেন, “অমিত শাহকে আদলতে হাজিরার নোটিশ পাঠানোই কাল হল অভিষেক তথা তৃণমূলের কাছে। এমনিতেই পামেলা গোস্বামী কান্ডে ব্যাকফুটে ছিল বিজেপি!”








