দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৬ নভেম্বর: সাত দফা দাবিতে বাম-কংগ্রেসের সর্বস্তরের সংগঠনের ডাকা বনধ “সর্বাত্মক” সফল বলে নেতৃত্ব দাবি করলেও, “আংশিক” সফল বলে মেনে নিচ্ছেন সব পক্ষই! পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় বনধের প্রভাব যথেষ্ট ভাবেই পরিলক্ষিত হয়েছে। দাবিগুলি সমর্থনে করে, অনেকেই বনধ পালন করেছেন স্বতঃস্ফূর্তভাবে। আবার কোথাও কোথাও, বনধ মানতে বাধ্য করা হয়েছে, ধর্মঘটীদের পক্ষ থেকে। পথে নামেনি সরকারি বাস ছাড়া, অন্য কোনো যানবাহন। ধর্মঘটীদের বিক্ষোভ ও রাস্তা অবরোধের মুখে, সরকারি বাসও দেওয়া হয়েছে। আইআইটি সহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে কর্মীদের ঢুকতে দেওয়া হয়েছে বাধা। রাস্তায় জ্বালানো হয়েছে টায়ার। যুব কংগ্রেস কর্মীরা জাতীয় সড়ক তথা মেদিনীপুর-খড়্গপুরের সংযোগস্থলে মোহনপুর ব্রিজ অবরোধ করেছেন। মেদিনীপুর শহরের জনশূন্য রাজপথে ক্রিকেট খেলে বনধের সাফল্য উদযাপন করেছেন বাম কর্মীরা। আর, শেষবেলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন অনেকে। উচ্ছ্বাসের সঙ্গে গ্রেপ্তারি বরণ করে, স্লোগান দিতে দিতে পুলিশের গাড়িতে উঠেছেন ধর্মঘটীরা। আদালত থেকে জামিন নিয়ে ফিরেই, বনধ সফল করার জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়েছে সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে।
আজ, ২৬ শে নভেম্বর, “সংবিধান দিবস” এর দিনই বাম-কংগ্রেসের ডাকা ধর্মঘটের সমর্থনে সকাল সকাল রাস্তায় নেমে পড়েন ধর্মঘটীরা। কংগ্রেসের তুলনায় রাস্তায় অধিক দেখা গেছে লাল পতাকা। মেদিনীপুর শহরের পোস্ট অফিস, বাস স্ট্যান্ড সহ বিভিন্ন এলাকায় দাপিয়ে বেড়ান বাম কর্মী-সমর্থকেরা। মেদিনীপুর শহরে জেলাশাসকের দপ্তরের বাইরে ধর্মঘটকারীরা বিক্ষোভ দেখান। ঠিক সকাল সাড়ে ১০ নাগাদ অফিস টাইমে জেলা কালেক্টরেট প্রধান গেটের বাইরে মিছিল করে এসে জমায়েত করেন বনধ সমর্থনকারীরা। এরপর স্লোগান দেওয়ার পাশাপাশি বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। অপরদিকে, খড়্গপুর শহরের প্রেমবাজার এলাকায় সরকারি বাসের সামনে বেনোজির বিক্ষোভ দেখিয়ে, ঘুরিয়ে দেওয়া হয় বাস। আইআইটি গেটের সামনে কর্মীদের বাধা দেওয়া হয়, ক্যাম্পাসে ঢুকতে। মেদিনীপুর শহরের LIC মোড়ে রাস্তা অবরোধ করে ক্রিকেট খেলাকে কেন্দ্র করে সাময়িক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এদিন সকালে LIC মোড়ে ধর্মঘটের সমর্থনে রাস্তা অবরোধ করে ক্রিকেট খেলতে শুরু করে বামপন্থী যুবকেরা। সেই সময় কোতওয়ালী থানার পুলিশ বাহিনী IC র নেতৃত্বে অবরোধকারীদের হটাতে গেলে পুলিশের সংগে বচসা শুরু হয়ে যায় আন্দোলনকারীদের। সেই সময় পুলিশ আন্দোলনকারীদের ঠেলে রাস্তার পাশে সরাতে গেলে পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখায় আন্দোলনকারীরা।
খড়গপুর শহরের পৌরসভা লাগোয়া রাস্তার উপর টায়ার জ্বালিয়ে পথ অবরোধ করেন বামপন্থী কর্মী সমর্থকরা। পরে পুলিশী হস্তক্ষেপে অবরোধ তুলে দেওয়া হয়। খড়্গপুর-মেদিনীপুরের সংযোগস্থলে মোহনপুর ব্রীজ (NH6) এ যুব কংগ্রেস পথ অবরোধ করে। উপস্থিত ছিলেন জেলা যুব কংগ্রেসের সভাপতি মহঃ সাইফুল, সহ-সভাপতি সুহাশিস পন্ডা, সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব শীট, মীর তারিক, গনেশ হাঁসদা, বিধানসভা যুব কংগ্রেস সভাপতি মীর আরিফ, প্রাক্তন বিধানসভা যুব কংগ্রেস সভাপতি অজিতেশ দাশ, ছাত্র পরিষদ নেতা অনুপম ভট্টাচার্য, সংখ্যালঘু শাখার চেয়ারম্যান ডাঃ জামান, আমির জামান সহ আরও অনেকে। অন্যদিকে, মেদিনীপুর শহরের কালেক্টরেট মোড়ে জেলাশাসক দপ্তরের বাইরে ক্রিকেট খেলার মধ্য দিয়ে বনধ উদযাপন করতে দেখা যায় বাম যুবকর্মীদের। হাতে ব্যাট নিয়ে তাদের সঙ্গে রাস্তা অবরোধ করে ক্রিকেট খেললেন, CPIM এর রাজ্য কমিটির সদস্য, DYFI এর প্রাক্তন সর্বভারতীয় সম্পাদক তাপস সিনহা। শেষবেলায়, মেদিনীপুর শহরে গ্রেপ্তার হলেন, SFI পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক প্রসেনজিৎ মুদি, দেবায়ন ভট্টাচার্য্য, অভিষেক চ্যাটার্জী, দিবাকর দোলোই, অরণ্য মন্ডল, রনিত বেরা ও শুভ্র শংকর দাস। এছাড়াও, খড়্গপুর, ঘাটাল সহ সারা জেলায় ৫৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার। এছাড়াও, প্রায় ১৬৬ জনকে আটক করা হয়েছিল বলেও খবর।
এদিকে, জেলা ও রাজ্যবাসীর আলোচনার প্রধান কেন্দ্রবিন্দুতে এখন, তৃণমূল জমানায় ‘বাম-কংগ্রেসের’ আজকের এই সর্বাত্মক সফল বনধ। অতীতে, এত সহজে, এত সফল বনধ দেখা যায়নি এ রাজ্যে! তবে, গতকাল থেকেই একটা হাওয়া ঘোরাফেরা করছিল, এবারের বনধ সফল হবে! তা সে, অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক দাবিগুলির কারণেই হোক কিংবা বিজেপি’কে রুখতে শাসক দলের পক্ষ থেকে বাম-কংগ্রেসের মনোবল চাঙ্গা করার চেষ্টাই হোক, বনধের ‘সাফল্য’ নিয়ে বোধহয় কোন মহলেরই সন্দেহ ছিল না! আর আজ দিনের শেষে বাম-কংগ্রেস কর্মীদের ‘মুখে হাসি’ সেই সফল বনধের ‘ফলাফল’ হলেও, ‘সাফল্যের কারণ’ খানি নিয়ে প্রশ্ন চিহ্ন রেখেই দিল!