দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ৯ অক্টোবর: কোথায় ‘বিকাশ’ ? বাংলাও কি সত্যিই ‘এগিয়ে?’ মেদিনীপুর আর খড়্গপুর শহরে পরপর দু’দিনে ঘটে যাওয়া দুই নির্মম সত্য
অস্বীকার করতে কষ্ট হলেও মেনে নিতেই হবে প্রশাসনকে। মেদিনীপুর শহরে চরম অভাবের তাড়নায় (বা, অর্থসঙ্কটে ) মাত্র চার হাজার টাকার বিনিময়ে নিজেদের আট মাসের কন্যা সন্তানকে বিক্রি করে দিলেন বাবা-মা! যদিও, শেষ মুহূর্তে
কাকুর সহৃদয়তায় আর শিশু সুরক্ষা দপ্তর ও কোতোয়ালি থানার তৎপরতায় উদ্ধার করা হল, বিক্রি হয়ে যাওয়া শিশুকন্যা’কে। অপরদিকে, খড়্গপুর শহরে লকডাউনের ফলে কাজ হারিয়ে আত্মহত্যা করলেন, নববিবাহিত (বছরখানেক বিবাহ
হওয়া) দম্পতি।
বিভিন্ন সূত্র ধরে জানা যায়, মেদিনীপুর শহরের জজকোর্ট ও শরৎপল্লী সংলগ্ন জেলা স্বাস্থ্য ভবনের পিছনে, হরিজনপল্লী থেকে গতকাল (৮ অক্টোবর) এক আট মাসের শিশুকন্যাকে উদ্ধার করেন, পুলিশ ও শিশু সুরক্ষা দপ্তরের আধিকারিকরা।
শিশুকন্যাটিকে বুধবার নাগাদ মাত্র চার হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছিল, পাশাপাশি একটি পাড়ায়। এরপরই, শিশুটির কাকা কোনোমতে চার হাজার টাকা জোগাড় করে, শিশুটিকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। শিশুটির কাকা
সংবাদমাধ্যমকে জানান, “দু’একদিন দিন ধরেই ওর বাবা-মা খুব ঝগড়াঝাঁটি করছিল। তারপর, বুধবার জানতে পারি বাচ্চা মেয়েটিকে ওরা চার হাজার টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে পাশের পাড়ায়। আমি গিয়ে, ওই টাকা জোগাড়
করে ওকে উদ্ধার করে নিয়ে আসি। কিন্তু, তারপরও ঝগড়াঝাঁটি করছিল ওর বাবা-মা। এরপরই বৃহস্পতিবার সকালে, পুলিশ ও আধিকারিকরা আসেন। আমার ভাইজি’কে আপাতত ওরাই নিয়ে যান সঙ্গে করে। আর দাদা বৌদিকে পুলিশ ধরে নিয়ে
গেছে।” জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিভিন্ন সূত্রে শিশুমৃত্যুর ঘটনা জানতে পারেন শিশু সুরক্ষা দপ্তরের আধিকারিকরা। দ্রুততার সাথে, পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে শিশুটিকে তাঁরা উদ্ধার করেন, ওই হরিজনপল্লী থেকে। স্বাস্থ্য পরীক্ষার
পর শিশুটিকে পাঠানো হয়, রাঙামাটিতে অবস্থিত মেদিনীপুরের বিদ্যাসাগর বালিকা ভবন হোমের অধীনে থাকা “শা হোমে”। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মেদিনীপুরের ওই দম্পতি এর আগেও নাকি এমন ঘটনা ঘটিয়েছে। স্থানীয় এক বাসিন্দা
বলেন, “ওদের বাড়িতে বাইরের দু-একজন লোককে আসা-যাওয়া করতেও দেখা গেছে বিভিন্ন সময়। কে কী কারণে আসছে তা আমরা জানবোই বা কী করে। এবার বুঝতে পারলাম কী পরিকল্পনা ছিল!” নিজের সন্তানকে বিক্রির ঘটনা এর আগেও
মেদিনীপুর শহর তথা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ঘটেছে। কয়েক বছর আগে গান্ধীঘাট এলাকার এক দম্পতি নিজের কন্যাসন্তানকে বিক্রি করে দিয়েছিলেন। কয়েকদিন আগেই ঘাটালের দম্পতি নিজের কন্যাসন্তানকে হাওড়ার এক নিঃসন্তান দম্পতির
কাছে বিক্রি করে দিয়েছিল। জানতে পেরে, পুলিশ ও শিশু সুরক্ষা দপ্তের আধিকারিকরা গিয়ে হাওড়ার গ্রাম থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন বিক্রি হয়ে যাওয়া কন্যা সন্তানকে। বৃহস্পতিবারের (৮ অক্টোবর) মেদিনীপুরের ঘটনা প্রসঙ্গে জেলা
শিশু সুরক্ষা আধিকারিক সন্দীপ কুমার দাস বলেন, “গোপন সূত্রে খবর পেয়ে, পুলিশের সহযোগিতায় শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত করে দেখছে। তদন্তে যা হওয়ার তা হবে।” স্বাভাবিকভাবেই, এই ঘটনায় কেন্দ্র
সরকারের “বেটি বাঁচাও বেটি পড়াও” কিংবা রাজ্য সরকারের “কন্যাশ্রী” প্রকল্পের সাফল্য নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। যদিও, মেদিনীপুর শহরের ওই ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর তথা সমাজকর্মী মৌ রায় বললেন,
“অস্বীকার করার উপায় নেই বিচ্ছিন্নভাবে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে। অভাবের তাড়নায় হোক কিংবা মূল্যবোধের অবক্ষয়, এই ধরনের ঘটনা কখনোই সমর্থনযোগ্য নয়। আমাদেরকেও আরো প্রচার চালাতে হবে। আর, ওই দম্পতিকেও কড়া শাস্তি
দেওয়া উচিত, যাতে এই ধরনের ঘটনা না ঘটে।”
এদিকে, আজ (৯ অক্টোবর) সকালে খড়্গপুর শহরের নিমপুরায় এক দম্পতি চরম অর্থকষ্ট বা নিদারুণ দারিদ্র্য সহ্য করতে না পেরে, মৃত্যুর পথ বেছে নিলেন! সদ্য তাঁরা (বছর খানেক আগে) বিয়ে করেছিলেন বলে জানা যায়। কিন্তু, এক
সঙ্গে দীর্ঘদিন পথচলার স্বপ্ন পূর্ণ করতে না পেরে, একসাথে মৃত্যুর পথই বেছে নিলেন তারা। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ওই যুবকের নাম ভেঙ্কট রাও (বয়স আনুমানিক ৩৫-৩৬) এবং তাঁর স্ত্রী’র নাম সীতালক্ষ্মী (বয়স
আনুমানিক ৩০)। তাঁরা আদতে অন্ধ প্রদেশের বাসিন্দা হলেও, দীর্ঘ সময় ধরে কাজের সূত্রে খড়্গপুরে থাকতেন। তবে লকডাউনের মাসখানেক আগে, তাঁরা নিজেদের দেশে (পড়ুন, রাজ্যে) ফিরে গিয়েছিলেন। সেখানেই, তাঁরা বিয়ে করেন।
এরপর, ফের তাঁরা খড়্গপুরে ফিরে আসেন কর্মসূত্রে। ফিরে আসার এক মাসের মধ্যেই লকডাউন শুরু হয়। কাজ হারান ওই দম্পতি। বেশ কয়েক মাস ধরে চরম অর্থকষ্টে ভুগছিলেন বলে জানিয়েছেন তার প্রতিবেশীরা। এরপরই আজ সকালে, নিমপুরায়
নিজেদের বাড়ির অদূরে এই ঘটনা ঘটান তাঁরা। স্থানীয়দের সহযোগিতায়, খড়্গপুর টাউন থানার পুলিশ মৃতদেহ দুটি উদ্ধার করে নিয়ে আসেন এবং ময়নাতদন্তের জন্য পাঠান। এই ঘটনায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে এলাকায়!





