মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২৫ সেপ্টেম্বর: জঙ্গলমহলের সেই বছর দশ-বারো আগের মাওবাদী স্মৃতি’ই যেন উদ্ধার করা হল, মাটি খুঁড়ে! ২০০৮-‘১০ এর সেই ভয়ঙ্কর দিনগুলিতে ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া,
বাঁকুড়া ও পশ্চিম মেদিনীপুরের জঙ্গল লাগোয়া এলাকাগুলিতে দিনে দুপুরেও কানে আসত গুলি-বোমার শব্দ! ঘুম থেকে উঠেই মানুষ শুনতো, অমুক জায়গায় পাওয়া গেছে লাশ (রক্তাক্ত মৃতদেহ)! পড়ন্ত বিকেলেই নেমে আসতো, রাত্রির (পড়ুন,
আতঙ্কের) ঘোর অমানিশা! সময় স্রোতে সেইসব দিন আর নেই। তবে, ভয়ঙ্কর সেইসব দিনের স্মৃতি আজও বহন করেন, জঙ্গলমহলের মানুষ। আর, এবার পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গোয়ালতোড় থানার উখলা’র জঙ্গল থেকে যখন মাটি খুঁড়ে উদ্ধার
করা হয়, বছর দশেক আগের ভাঙাচোরা ৮-৯ টি বন্দুক আর জরাজীর্ণ টিফিন কৌটো (ল্যান্ড মাইন তৈরিতে মাওবাদীরা ব্যবহার করত বা এখনো করে থাকে), সঙ্গে জীর্ণদশার ইলেকট্রিক তার; তখন সেইসব দিনের ভয়াল স্মৃতিই যেন মানস পটে ভেসে
ওঠে! গোয়ালতোড় থানার পুলিশ আজ (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর নাগাদ, জীর্ণ দশার এই সমস্ত অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার করে, গোপন সূত্রে খবর পেয়ে। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের প্রাথমিক অনুমান, ভাঙাচোরা বন্দুক ও টিফিন কৌটো প্রভৃতি
অন্তত বছর দশেক আগের। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পুলিশ তদন্তে নেমেছে, আরও বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহের জন্য।
এখন ২০২০ তে এসে বদলেছে অনেক কিছুই। তবে, ইতিউতি আতঙ্ক, গুলি চলা, বোমাবাজি, খুন-খারাবি’র ঘটনা জেলাজুড়ে শোনা যায় প্রায়ই। মাঝেমধ্যে, মাওবাদী পোস্টার পড়ার খবরও পাওয়া যায়, ঝাড়গ্রাম কিংবা পশ্চিম মেদিনীপুরের
বিভিন্ন অংশে। তবে, একসাথে, এতগুলি বন্দুক উদ্ধারের ঘটনা বেশ অনেকদিন পরে! আর, এতেই রীতিমতো চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়। পুলিশ শুধু জানিয়েছে, ৯-১০ বছর আগের ভাঙাচোরা ৮-৯ টি মালিকানাহীন দেশি বন্দুক উদ্ধার করা
হয়েছে। বন্দুক উদ্ধার হলেও কোনো গুলি উদ্ধার হয়নি। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে, গোয়ালতোড় থানার পুলিশ জেসিবি নিয়ে গিয়ে, এই বন্দুক গুলি উদ্ধার করে। পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। জানা যায় যে, এই বন্দুক গুলি কম্বলে
মোড়া অবস্থায় মাটির নীচে ছিল। কম্বলের উপরে পলিথিন জড়ানো ছিল। তবে, কোনোটাই ব্যবহারযোগ্য অবস্থায় ছিল না। সঙ্গে একটি, জীর্ণ দশার টিফিন কৌটো ও কিছু তার পাওয়া গেছে। স্থানীয় মানুষদের অনুমান, মাওবাদী সময়ের
একেবারে শেষের দিকে (২০১০-‘১১), মাওবাদীরাই হয়তো, এইসব অস্ত্রশস্ত্র মাটির নিচে চাপা রেখে দিয়েছিল! তারপর, পরিবর্তিত সময়ে সেগুলির আর ‘খোঁজ’ নেয়নি কেউ। মাটি খুঁড়ে আজ ‘স্মৃতি’
(অবশ্যই আতঙ্কের) টুকুই উদ্ধার করল পুলিশ!





