দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১১ মে: অতিমারী আবহে কিছুটা হলেও স্বস্তির খবর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলাবাসীর জন্য! জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের মঙ্গলবার সকালের রিপোর্ট অনুযায়ী, গত চব্বিশ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমিত হয়েছেন মাত্র ৩৮৩ (RT-PCR- ১৪৪, Rapid Antigen- ২১৮, Truenat- ২১) জন। ফলে, গত ৭ দিন পর ফের সংক্রমণ নামল ৩০০’র ঘরে। জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের রিপোর্ট অনুযায়ী গত ৭ দিনের পরিসংখ্যান হল এরকম:—মঙ্গলবার- ৩৬৪
বুধবার- ৫৭৭
বৃহস্পতিবার- ৫৮৮
শুক্রবার- ৫৭৫
শনিবার- ৫৫৯
রবিবার-৪৮৩
সোমবার- ৫১৪
মঙ্গলবার (১১ মে)- ৩৮৩।
আর এই পরিসংখ্যান থেকে স্পষ্ট যে, সংক্রমণ কমছে ধীরে ধীরে। তবে, মৃত্যু’র হার এখনও কমেনি! জেলার করোনা হাসপাতাল গুলিতে গত চব্বিশ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৫ (মেদিনীপুর মেডিক্যাল- ৩, শালবনী- ১, ঘাটাল- ১) জনের। এর আগের দিন, অর্থাৎ সোমবারের রিপোর্ট অনুযায়ী মৃত্যু হয়েছিল ১০ (মেদিনীপুর মেডিক্যাল- ৩, শালবনী- ৩, ঘাটাল- ২, খড়্গপুর- ২) জনের।


Whatsapp Group এ

এদিকে, জেলা জুড়ে সংক্রমণের হার ধীরে ধীরে কমতে শুরু করলেও, এই মুহূর্তে জেলার “করোনা হটস্পট” হিসেবে অবস্থান করছে মেদিনীপুর শহর। গত তিনদিনে সারা জেলায় সংক্রমিত হয়েছেন- ১৩৮০ (৪৮৩, ৫১৪ ও ৩৮৩) জন। এর মধ্যে, শুধু মেদিনীপুর শহর ও সংলগ্ন এলাকা মিলিয়েই ৫২৭ (১৮০, ১৮০, ১৬৭) জন। মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি জেলার অন্য প্রান্তের কয়েকজনকে বাদ দিলেও সংখ্যাটা ৫০০’র কাছাকাছি। অপরদিকে, খড়্গপুর শহর ও ঘাটাল মহাকুমাতে কমতে শুরু করেছে সংক্রমণ। গত দু’দিনে (সোমবার ও মঙ্গলবারের রিপোর্ট অনুযায়ী) খড়্গপুর শহর ও গ্রাম মিলিয়ে করোনা সংক্রমিত যথাক্রমে ১০০ ও ৮৬। ঘাটাল মহকুমায় যথাক্রমে- ৯০ ও ৩৫। একই অবস্থা, ডেবরা, সবং, পিংলা, বেলদা-নারায়ণগড়, দাঁতন প্রভৃতি এলাকায়। গত ২-৩ দিনে সংক্রমণ কমেছে শালবনীতেও। তবে, গড়বেতা এলাকায় খুব সামান্য কমেছে।


এদিকে, মঙ্গলবার সকালে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের রিপোর্টে জেলায় যে ৩৮৩ জন করোনা সংক্রমিত হয়েছেন, এর মধ্যে মেদিনীপুর শহর, গ্রামীণ এলাকা ও মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে ১৬৭ জন। মেদিনীপুর সদর ব্লকের বিদ্যাসাগর ইউনিভার্সিটি এলাকা, গোপগড়, চাঁদড়া, দেয়াপাড়া, চিলগোড়া, শাঁখাডাঙা, মালবনি এবং হরিশপুর মিলিয়ে অন্তত ১৫ জন করোনা সংক্রমিত হয়েছেন গত চব্বিশ ঘণ্টায়। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে অন্তত ২০ জনের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। এর মধ্যে অনেকেই বিভিন্ন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন আছেন। শহর মেদিনীপুরে করোনা সংক্রমিত হয়েছেন অন্তত ১৩২ জন। খাপ্রেলবাজার, রবীন্দ্র নগর, নতুন বাজার, শরৎপল্লী, বরিশাল কলোনী, নজরগঞ্জ, আবাস, কুইকোটা, সুজাগঞ্জ (জগন্নাথ মন্দির), বক্সীবাজার, কোতবাজার, রাজাবাজার, ধর্মা, তোড়াপাড়া, তলকুই, রাঙামাটি, বার্জটাউন, কেরানীটোলা, অরবিন্দ নগর, হবিবপুরে বেলাগাম গোষ্ঠী সংক্রমণ দেখা দিয়েছে! প্রতিটা এলাকা থেকে গড়ে ১০ থেকে ১৫ জন করে সংক্রমিত হয়েছেন। অন্যদিকে, ফকিরকুয়া, মীরবাজার, হাঁসপুকুর এলাকা থেকে এক বা একাধিক জন করোনা সংক্রমিত হয়েছেন। এছাড়াও, আছে পুলিশ লাইন এলাকা। গত চব্বিশ ঘণ্টায় পুলিশ লাইন ছাড়াও ডি.এম বাংলোর ২ জন করোনা সংক্রমিত হয়েছেন। অপরদিকে, সোমবারের রিপোর্ট অনুযায়ী ১৮০ জন করোনা সংক্রমিত হয়েছিলেন! এই রিপোর্ট অনুযায়ী, মেদিনীপুর সদরে- ১০ (পাঁচখুরি, খিরিশশোল, গুড়গুড়িপাল ৩, মালিয়াড়া ২, গোপগড়, শিরোমণি, বাড়ুয়া) জন। মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে ৭ জন এবং মেদিনীপুর শহরে ১৬৩ জন। শহরের মধ্যে, মির্জাবাজারে সংক্রমিত সর্বাধিক। প্রায় ২০ জনেরও বেশি। ভয়াবহ গোষ্ঠী সংক্রমণের মধ্যেও এই এলাকায় মাস্ক ব্যবহার করছেন না অনেকেই, অভিযোগ এমনটাই। এছাড়াও, নজরগঞ্জের গোষ্ঠী সংক্রমণও নিয়ন্ত্রণের বাইরে পৌঁছে গেছে। এছাড়াও, গোষ্ঠী সংক্রমণের জর্জরিত সিপাই বাজার, হবিবপুর, ধর্মা, অশোকনগর, আবাস, কুইকোটা, রাঙামাটি, তাঁতিগেড়িয়া, বটতলা চক, বক্সীবাজার, কামারআড়া, বিধাননগর, রামকৃষ্ণ নগর, আর আর নগর, অরবিন্দ নগর, সুজাগঞ্জ (জগন্নাথ মন্দির), রাজাবাজার, কোতবাজার, নতুন বাজার, কেরানীটোলা, তলকুই, তোড়াপাড়া প্রভৃতি এলাকা থেকেও ফের একাধিক জন করে করোনা সংক্রমিত হয়েছেন। গোলকুয়াচক, বিদ্যাসাগর সরণী, বরিশালকলোনী, পোস্ট অফিস রোড, সুভাষনগর, জর্জকোট প্রভৃতি এলাকা থেকেও এদিন করোনা সংক্রমিতের সন্ধান পাওয়া গেছে। এছাড়াও পুলিশ লাইন থেকে নতুন করে ৫ জনের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে।

এদিকে, খড়্গপুরে গত দু’দিনে সংক্রমিত যথাক্রমে ১০০ ও ৮৬। সোমবার, রেল সূত্রে ২৭ জন, আইআইটি সূত্রে ১২ জন এবং গ্রামীণ এলাকায় মাত্র ৪ জন সহ মোট ১০০ জন করোনা সংক্রমিত হয়েছেন খড়্গপুরে। মঙ্গলবার, খড়্গপুরে সংক্রমিত ৮৬ জন। রেল সূত্রে ২০ জন, আইআইটি সূত্রে ৪ জন এবং গ্রামীণ এলাকায় ৬ জন করোনা সংক্রমিত হয়েছেন। শহরে ৫৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন নতুন করে। সোমবার ও মঙ্গলবার, বেলদা (নারায়ণগড়) এলাকায় যথাক্রমে- ৩ ও ৬। কেশিয়াড়িতে ৮ ও ৮। কেশপুরে- ৪ ও ৮। অন্যদিকে, গড়বেতায় সোমবার করোনা সংক্রমিত হয়েছিলেন ৫৬ (দুর্লভগঞ্জ, কিয়াবনী, স্বর্গডিগ্রি, ওড়গঞ্জ, দ্বারিগেড়িয়া, অপর্ণাপল্লী প্রভৃতি এলাকায় দেখা দিয়েছে প্রবল গোষ্ঠী সংক্রমণ) জন এবং মঙ্গলবার সংক্রমিত হয়েছেন ১২ (গড়বেতার লাপুড়িয়া, গড়বেতা, রায়পাড়া, রাধানগর প্রভৃতি এলাকা এবং রোডের বাঁশডিহা, শ্যামপুর প্রভৃতি) জন। শালবনীতে, ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক (BMOH) সহ সোমবার করোনা সংক্রমিত হলেন ১৬ জন। এর মধ্যে শালবনী বাজার এলাকাতেই একটি পরিবারের ৪ জন সহ মোট ১১ জন সংক্রমিত হয়েছেন। এছাড়াও, বিআরবি বা টাঁকশাল, ভাদুতলা, দেবগ্রাম, রাউতোড়া, বেউচাতে ১ জন করে মোট ৫ জনের করোনা রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। মঙ্গলবার শালবনীতে করোনা সংক্রমিত কমে ৬! এর মধ্যে, গোদাপিয়াশাল এলাকায় ২ জন, তিলাখুলিতে ১ জন, শালবনী বাজারে ১ জন এবং শালবনী হাসপাতাল সূত্রে আরও ২ জনের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। ডেবরায় ৯ জন, সবংয়ে ৬ জন, পিংলায় ২ জন করোনা সংক্রমিত হয়েছেন সোমবার। মঙ্গলবার, ডেবরায় ১৪ জন, সবংয়ে ৫ জন এবং পিংলায় ৮ জন করোনা সংক্রমিত হয়েছেন। দাঁতনে গত ২ দিনে মিলিয়ে করোনা সংক্রমিত হয়েছেন মাত্র ৭ জন। অপরদিকে, ঘাটাল মহকুমায় সোমবার ও মঙ্গলবার করোনা সংক্রমিত হয়েছেন যথাক্রমে ৯০ জন ও ৩৫ জন।








