ভ্যাকসিনে অনীহা জেলার স্বাস্থ্যকর্মীদের! সচেতনতায় শীর্ষে ডেবরা, মুখ লুকোচ্ছে খড়্গপুর, মাঝামাঝি অবস্থানে মেদিনীপুর-শালবনী-সবং-ঘাটাল সহ বাকিরা

thebengalpost.in
পশ্চিম মেদিনীপুরে টিকাকরণের প্রথম দিন উপস্থিত জেলাশাসক, মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ প্রমুখ :

মণিরাজ ঘোষ, পশ্চিম মেদিনীপুর, ২০ জানুয়ারি: ‘গিনিপিগ’ হয়েও লাভ হলনা স্বাস্থ্য আধিকারিক থেকে স্বেচ্ছাসেবকদের! নিজেরা করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে সুস্থ থাকার পরেও, উৎসাহিত করতে পারলেননা অর্ধেকের বেশি (এখনও পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী) স্বাস্থ্যকর্মী দের! এই চিত্রটা সারা দেশের সাথে সাথে পশ্চিমবঙ্গেও। ভীতি-আতঙ্ক-উপেক্ষা-অগ্রাহ্য প্রভৃতি বিভিন্ন কারণে, করোনা ভ্যাকসিন নেননি নথিভুক্ত অর্ধেকের বেশি চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। একই অবস্থা পশ্চিম মেদিনীপুরেও! ভ্যাকসিনেশন এর প্রথম তিনদিনে (১৬, ১৮ ও ১৯ জানুয়ারি) নথিভুক্ত বা তালিকাভুক্ত প্রায় ৪০০০ (৪০৬৮) স্বাস্থ্যকর্মী’র ভধ্যে করোনা ভ্যাকসিন (করোনা টিকা) নিয়েছেন মাত্র ১৭৬৩ জন। শতাংশের বিচারে অর্ধেকের (৫০ শতাংশ) থেকেও অনেকটাই কম। কিন্তু, রাজ্য ও জেলায় যখন ভ্যাকসিন পৌঁছয়, উৎসাহ ও উচ্ছ্বাস দেখে এমনটা সত্যিই কল্পনা করা যায়নি! সর্বোপরি, ১৬ ই জানুয়ারি প্রথম দিনের ভ্যাকসিনেশনে ভ্যাকসিন নিতে এগিয়ে এসেছেন একাধিক প্রথম সারির স্বাস্থ্য আধিকারিক, চিকিৎসক ও নার্সরা। পরীক্ষামূলক পর্যায়ে, স্বেচ্ছাসেবক তথা নেতা-মন্ত্রীদের কথা ছেড়ে দিলেও, বিভিন্ন জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (CMOH), উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (Dy CMOH), ব্লক মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক (BMOH), মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ‌ (PRINCIPAL), সুপার (SUPERINTENDENT) প্রমুখরা প্রথম দিনই ভ্যাকসিন গ্রহণ করে, অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী তথা সাধারণ মানুষকে উৎসাহিত করেছেন তথা ভ্যাকসিন-ভীতি কাটাতে উদ্যোগী হয়েছেন। তা সত্ত্বেও, এই চিত্রটা বেশ উদ্বেগের। কারণ হিসেবে, স্বাস্থ্য আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, “একটা ভীতি কাজ করছে! আস্তে আস্তে ভয়টা হয়তো কাটবে। প্রশাসনকেও এগিয়ে আসতে হবে, ভীতি কাটানোর জন্য যথাযথ প্রচারের মাধ্যমে।”

thebengalpost.in
মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ গত ১৬ ই জানুয়ারি ভ্যাকসিন নিলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ নিমাই চন্দ্র মন্ডল :

[ আরও পড়ুন -   তমলুক-শ্রীরামপুর রাজ্য সড়কের বেহাল দশা, গভীর সমস্যায় সাধারণ মানুষ ]

এখনও পর্যন্ত, সারা দেশে ভ্যাকসিন নেওয়ার পর যে দু-একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে, সেগুলির কোনোটিতেই ভ্যাকসিনকে সরাসরি দায়ী করেননি বিশেষজ্ঞরা। অন্যান্য রোগ বা কারণকেই দায়ী করা হয়েছে। অপরদিকে, অন্যান্য যে সমস্ত উপসর্গ দেখা দিয়েছে বা বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে হাসপাতলে ভর্তি হতে হয়েছে, ভ্যাকসিন নেওয়ার পর, সেগুলির প্রত্যেকটিই স্বাভাবিক বলে বর্ণনা করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তা সত্ত্বেও প্রথম সারির করোনা যোদ্ধা বা স্বাস্থ্যকর্মীরা আরেকটু সময় নিচ্ছেন বলেই মনে করা হচ্ছে। অনেকে আবার সরাসরি উপেক্ষাও করছেন। তাঁরা মনে করছেন, ভ্যাকসিন না নিয়ে যখন এত দিন ভালো আছি, তাহলে আর নিয়ে কি লাভ! পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিক বললেন, “এমনিতেই বাঙালিরা একটু ভীতু প্রকৃতির। অনেকে আবার মজা দেখতে ভালোবাসে। মনে মনে ভাবছে, দেখিনা অন্যরা নিয়ে কি হয়! তবে, আমরা অনেকেই ভ্যাকসিন নিয়ে সুস্থ আছি, আশা করছি এবার ধাপে ধাপে স্বাস্থ্যকর্মীরা এগিয়ে আসবেন, অন্তত নিজেদের জীবন ও পরিবারের কথা ভেবে। প্রশাসনের পক্ষ থেকেও প্রয়োজনীয় প্রচার প্রয়োজন।” প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ নিমাই চন্দ্র মন্ডল, উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ সৌম্যশঙ্কর সারেঙ্গী, মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ডাঃ পঞ্চানন কুন্ডু, সুপার ডাঃ তন্ময় কান্তি পাঁজা থেকে শুরু করে একাধিক সিনিয়র চিকিৎসক ও ব্লক মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকরা‌ টিকা নিয়ে রীতিমতো সুস্থ আছেন এবং নিজেদের ডিউটি করে যাচ্ছেন। শুধু তাই নয়, পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলার ভ্যাকসিন পরবর্তী ক্ষেত্রে একটিও দুর্ঘটনা বা বড় বিপর্যয়ের ঘটনা ঘটেনি। তা সত্ত্বেও ভীতি বা অনীহার ঘটনা বেশ আশ্চর্যজনক!

thebengalpost.in
পশ্চিম মেদিনীপুরে টিকাকরণের প্রথম দিন উপস্থিত জেলাশাসক, মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ প্রমুখ :

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার যে ১১ টি সেশন সাইট বা টিকাকরণ কেন্দ্রে ভ্যাকসিনেশন বা টিকাকরণ চলছে, তার মধ্যে টিকা গ্রহণের ক্ষেত্রে (প্রথম তিন দিনে) শীর্ষস্থানে আছে ডেবরা গ্রামীণ হাসপাতাল। ৩৬৪ জন নথিভুক্ত স্বাস্থ্যকর্মী’র মধ্যে ইতিমধ্যে ভ্যাকসিন নিয়ে নিয়েছেন ২৮৭ জন। সচেতনতায় ডেবরা যদি শীর্ষ স্থান দখল করে, খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতাল নিঃসন্দেহে লজ্জার স্থানটি দখল করে আছে! ৩৪০ জন স্বাস্থ্যকর্মীর মধ্যে গত তিনদিনে (১৬, ১৮ ও ১৯ জানুয়ারি) ভ্যাকসিন নিয়েছেন মাত্র ৭০ জন! এমনিতেই, খড়্গপুর শহর করোনা সংক্রমণের ক্ষেত্রে প্রথম সারিতে অবস্থান করেছে জেলার সংক্রমণের ইতিহাসে। এরপর, মাস্ক পরা ও সচেতনতার ক্ষেত্রেও রেলশহরের তীব্র অনীহা লক্ষ্য করা গেছে। আর এবার করোনা টিকা গ্রহণের ক্ষেত্রেও যেন মুখ লুকোতেই ব্যস্ত! মেদিনীপুর শহরও যে এক্ষেত্রে খুব বেশি এগিয়ে আছে তা নয়! মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজে চলা এই ভ্যাকসিনেশন কর্মসূচিতে এখনও পর্যন্ত ৩৩০ জনের মধ্যে ভ্যাকসিন নিয়েছেন ১৪৩ জন। শালবনী গ্রামীণ হাসপাতালে ৪০০ জনের মধ্যে ১৪৮ জন, সবং গ্রামীণ হাসপাতালে ৩৯৩ জনের মধ্যে ১৩৩ জন, কেশপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ৪২০ জনের মধ্যে ২৩১ জন, ঘাটাল মহকুমা হাসপাতালে ৩৪৫ জনের মধ্যে ১৮৩ জন টিকা নিয়েছেন। দাসপুর গ্রামীণ হাসপাতাল, বেলদা গ্রামীণ হাসপাতাল এবং গড়বেতা গ্রামীণ হাসপাতালের ক্ষেত্রেও সংখ্যা টা প্রায় কাছাকাছি। ৩৫০-৪০০ জনের মধ্যে টিকা নিয়েছেন প্রায় ১৪০-১৫০ জন। তবে, সমস্ত গুজব-প্ররোচনা-ভীতি-আতঙ্ক উপেক্ষা করেই ধাপে ধাপে অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরাও এগিয়ে আসবেন বলে আশাবাদী সকলেই।

thebengalpost.in
শালবনীতে টিকা নিলেন ব্লক মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ নবকুমার দাস :

[ আরও পড়ুন -   করোনা স্রোতে ভাসছে মেদিনীপুর, সংক্রমণের হাফ সেঞ্চুরি, মৃত্যু কালেক্টরেটের এক আধিকারিকের ]