দ্য বেঙ্গল পোস্ট বিশেষ প্রতিবেদন, ১০ অক্টোবর: দুর্গাপুজোর পর রাজ্যে আসতে পারে করোনা-সুনামি বা করোনা’র ঢেউ! সতর্ক করে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। রাজ্য পর পর দু’দিনই (বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার) সংক্রমণ বেড়ে সাড়ে তিন হাজারের উর্ধ্বে! শুক্রবার সন্ধ্যার বুলেটিন অনুযায়ী, রাজ্যে গত চব্বিশ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ৩৫৭৩ জন, যা এখনো পর্যন্ত একদিনে সর্বাধিক! বৃহস্পতিবার সংক্রমিত হয়েছিলেন, ৩৫২৬ জন। সরকারিভাবে মৃত্যুও হচ্ছে প্রতিদিন ৬২-৬৩ জন করে। বেসরকারি হিসেব অনুযায়ী বা সরকারি হিসেবের বাইরে ধরলে, সংখ্যাটা আরো বেশি! এই পরিস্থিতিতে, বৃহস্পতিবার থেকে রাজ্যের বিভিন্ন চিকিৎসকেরা ব্যক্তিগতভাবে বা সংগঠনের মাধ্যমে, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন, দুর্গাপূজা (Durgapuja) নিয়ে সতর্কতা অবলম্বনের বিষয়ে। রাজ্যবাসীর কাছেও তাঁরা আবেদন করেছেন, পুজোর বাজার কিংবা দুর্গোৎসব সাবধানে পালন করার বিষয়ে। নাহলে যে পুজোর পরই করোনা’র ঢেউ আছড়ে পড়বে, আর হাসপাতাল গুলিতে জায়গা দেওয়া সম্ভব হবে না, সে বিষয়েও সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে, মহারাষ্ট্রে গণেশ চতুর্থী নিয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। নবরাত্রিতে ঐতিহ্যশালী গরবা নাচ বাতিল করেছে গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র। উত্তরপ্রদেশে রামলীলা’র অনুমতি দেওয়া হয়েছে শর্তসাপেক্ষে এবং দুর্গাপূজা করতে বলা হয়েছে নিজেদের বাড়িতেই। অপরদিকে, ওনাম উৎসবের সময় স্বাস্থ্যবিধি শিথিল হওয়ায়, করোনার সংক্রমণ বেড়েছে লাগামহীন ভাবে। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন এবং একটি ফুটবল ম্যাচে জনসমাগমের পর স্পেনেও কোভিড-সংক্রমণ চরম আকার ধারণ করে। দুর্গাপুজো’কে কেন্দ্র করে এ রাজ্যেও যাতে এরকম পরিস্থিতি তৈরি না হয়, সে জন্যই সময় থাকতে কঠোর ভাবে পদক্ষেপ করার আর্জি জানিয়েছে চিকিৎসকদের একটি সংগঠন। এদিকে, শুক্রবার রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল বিজেপি’র রাজ্য সভাপতি তথা সাংসদ দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)ও বঙ্গবাসীর কাছে আবেদন করেছেন, “ভক্তিভরে দুর্গাপূজা করুন, কিন্তু দুর্গোৎসব বন্ধ রাখুন। বাড়িতে থেকেই মায়ের কাছে প্রার্থনা করুন, যাতে এই মহামারী (Pandemic) থেকে আমরা দ্রুত মুক্ত হতে পারি।” তবে, দিলীপ বাবু’র এই আবেদনে অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন! যেখানে তীব্র সংক্রমণের মুহূর্তে, রাজ্যে রাম জন্মভূমি নিয়ে তাঁরা বাড়াবাড়ি করতে পিছপা হননি, কিংবা ২৫০০০ হাজার লোক নিয়ে নবান্ন অভিযান করতেও দ্বিধাবোধ করেননি! কখনোবা বেফাঁস মন্তব্য করে বসেন, “করোনা চলে গেছে!” সেই দিলীপ বাবু হঠাৎ করে দুর্গাপূজা নিয়ে সতর্ক করায় স্তম্ভিত অনেকেই। অনেকেই আবার এর মধ্যে রাজনীতি খুঁজছেন! মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেহেতু এবার করোনা’র মধ্যেও পুজো নিয়ে উৎসাহী কিংবা ক্লাবগুলোকে অনুদান দিয়েছেন, সেজন্যই কি এই সতর্কবার্তা’র মধ্য দিয়ে বিরোধিতার উষ্ণ প্রস্রবণ বইয়ে দেওয়া! তবে, রাজনীতি যাই বলুক বা মিটিং-মিছিল যাই হোক, সাধারণ মানুষ কিন্তু সতর্ক না হলেই বিপদ। এমনিতেই, চিকিৎসা পরিষেবা’র উপর অবর্ণনীয় চাপ, তার উপর নিজেরাই নিজেদের বিপদ ডেকে আনলে, এর ফলও যে নিজেদেরকেই ভুগতে হবে তা বলাই বাহুল্য!


রাজ্যে এবং দেশে করোনা সংক্রমণ ভয়ঙ্করভাবে বাড়তে থাকার মধ্যেই, নিঃশব্দে ১০০০ পেরিয়ে গেল ঝাড়গ্রাম জেলার করোনা সংক্রমণ। জঙ্গমহলের এই জেলা তথা অরণ্য সুন্দরী ঝাড়গ্রাম জুলাই মাসেও গ্রিন জোনে অবস্থান করেছে। কিন্তু, আত্মতুষ্টি আর অসচেতনতার মাশুল গুনতে গুনতে এখন প্রতিদিনই করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন ২০ থেকে ৩০ জন করে। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ঝাড়গ্রামে করোনা সংক্রমিত হয়েছেন যথাক্রমে, ২৬ জন ও ২৪ জন। বৃহস্পতিবারই ঝাড়গ্রামে মোট সংক্রমণ ১০০০ পেরিয়ে গেছে। শুক্রবারের পর, ঝাড়গ্রাম জেলায় (সরকারি তথ্য অনুযায়ী) মোট সংক্রমিত ১০২৬ জন। ৭৮ শতাংশ হারে (রাজ্যের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ কম) সুস্থ হয়ে উঠেছেন ৮০৪ জন। চিকিৎসাধীন আছেন ২১২ জন। মৃত্যু সংখ্যা বুলেটিন বলছে ১০। বিভিন্ন সূত্রের হিসেব, মৃত্যু সংখ্যা অনেকটাই বেশি। শুধু সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই ওই সংখ্যাটা অতিক্রম করে গেছে, জেলা হাসপাতাল তথা করোনা হাসপাতালের হিসেব অনুযায়ী। এদিকে, রাজ্যে সুস্থতার হার প্রায় ৮৮ শতাংশ হলেও, সক্রিয় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা যেভাবে বাড়ছে এবং মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়ে চলেছে সমানতালে, তাতে ওষুধ বা ভ্যাকসিন বেরোনোর আগে, শুধুমাত্র নিজেদের জীবন আর স্বাস্থ্যকর্মীদের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা রক্ষা করার তাগিদে, অত্যন্ত সতর্ক বা সচেতন থেকেই এবছরের দুর্গোৎসব পালন করা উচিৎ বলে মনে করছেন, বিশেষজ্ঞ থেকে সচেতন নাগরিকবৃন্দ।






