দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, মেদিনীপুর, ১৮ ডিসেম্বর: “মেলাবেন….তিনি মেলাবেন!” মিলে যাচ্ছে অনেক কিছুই। ২০১০-‘১১ র সেই প্রেক্ষাপট আর ২০২০-‘২১ এর এই পরিস্থিতি। সম্প্রতি, মেদিনীপুরের ঐতিহাসিক কলেজ-কলেজিয়েট ময়দানে মহা-জনসভা করতে উপস্থিত হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৭ ই ডিসেম্বরের সেই সভার মোটামুটি ৭ দিন আগে থেকেই মাঠের দখল নিয়েছিল পুলিশ-প্রশাসন। বন্ধ ছিল, খেলাধুলা-প্রাতঃভ্রমণ। সভার একদিন আগে থেকে দলীয় কর্মী এবং সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি ছাড়া প্রবেশ বন্ধ ছিল সর্বসাধারণের জন্য। এমনকি, সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদেরও প্রবেশ করতে হচ্ছিল, আই কার্ড বা পরিচয়পত্র দেখিয়ে! আগামীকাল (১৯ ডিসেম্বর) মেদিনীপুরের সেই কলেজ-কলেজিয়েট ময়দানেই ঐতিহাসিক সভা উপলক্ষ্যে উপস্থিত হতে চলেছেন, দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। সঙ্গে কেন্দ্র ও রাজ্যের একঝাঁক হেভিওয়েট নেতা-নেত্রী, বিধায়ক-সাংসদ। মঞ্চের আশপাশে কেন্দ্রীয় বাহিনীর কড়া নজরদারি নিয়ে সংশয় নেই। কেন্দ্র ও রাজ্য পুলিশের তৎপরতা নিয়েও প্রশ্ন নেই। তবে, মাঠ খোলা আছে সর্বসাধারণের জন্য। আজ বিকেল অবধি খেলাধুলা করল কচিকাঁচার দল। পরিচয়পত্র না দেখিয়েই প্রবেশ করতে পারছেন সাংবাদিকরা। আগের রাতে অর্থাৎ আজ (১৮ ডিসেম্বর) এই প্রতিবেদন লেখা অবধি রীতিমতো জমজমাট কলেজ মাঠ প্রাঙ্গণ! না, বিষয়টি আসলে মুখ্যমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী’র নিরাপত্তা সম্পর্কিত নয়; এই পার্থক্য আসলে শাসক-বিরোধীর মধ্যে চিরন্তন! মনে করিয়ে দিচ্ছে, ২০০৮ থেকে ২০১১। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য’ই শুধু নয়, বামফ্রন্টের মাঝারি মানের নেতাদেরকেও এভাবেই ঘিরে রাখা হতো কড়া প্রহরায়। জেড প্লাস নিয়েও জঙ্গলমহলে প্রবেশ করতে দ্বিধাগ্রস্ত হতেন পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম ‘জনপ্রিয়’ মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। আর সেসময়ই মাত্র ১০-১২ জন কর্মী নিয়ে জঙ্গলমহল থেকে পাহাড় ঘুরে বেড়াতেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী তথা ‘জননেত্রী’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

যুগে যুগে ‘শাসক’ তার ক্ষমতা, প্রতিপত্তি, দম্ভের কারণেই ধীরে ধীরে জনবিচ্ছিন্ন হয়েছেন! বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী’র বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলনামূলক ভাবে কম থাকলেও, সেই গতানুগতিক শাসনতন্ত্র বা নিয়মতান্ত্রের বেড়াজালে তিনিও আবদ্ধ হয়ে পড়েছেন, হয়তো বা নিজের অজান্তেই! রাজ্য প্রশাসন মুখ্যমন্ত্রী’র নিরাপত্তা নিয়ে এতোই ব্যস্ত হয়ে পড়লেন, ৬-৭ দিন আগে থেকেই মাঠ বন্ধ! বন্ধ ছোটোদের খেলাধুলা কিংবা বড়দের প্রাতঃভ্রমণ! তবে কি পুলিশ প্রশাসনের কাছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী’র নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেলতা নেই? আসলে, বিষয়টি আদতেও তেমন নয়! বর্তমান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দল কেন্দ্রে ক্ষমতা থাকলেও, রাজ্যে বিরোধী। তাই, মানুষের কাছে পৌঁছানোর তাগিদ অনেক বেশি! একইসাথে, বিরোধী থাকাকালীন ‘হারানোর’ ভয় কম বা হারানোর কিছুই নেই। কিন্তু, শাসকের হারানোর ভয় অনেক বেশি, ক্ষমতায় থেকে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ‘বিড়ম্বনায়’ পড়ার ভয়, সাধারণ মানুষের ‘চক্ষুশূল’ হয়ে অপদস্থ হওয়ার ভয়। হয়তোবা, এখনের বিরোধীদলও আগামীদিনে (এরাজ্যে) ক্ষমতায় এলে পরিস্থিতি বদলে যাবে। কারণ, তখন তো তাঁরাই ‘শাসক’! সেই উত্তর সময় দেবে। তবে, আজ, ১৮ ডিসেম্বর, ২০২০ ‘র এই সময়ে দাঁড়িয়ে ‘হাওয়া বদলের’ এক অদৃশ্য ইঙ্গিত যেন ঐতিহাসিক কলেজ-কলেজিয়েট ময়দান’কে কেন্দ্র করেই বয়ে যাচ্ছে!