দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, বাঁকুড়া, ২৫ নভেম্বর: নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পশ্চিমবঙ্গ সফরে এসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ প্রথমদিন (৫ নভেম্বর) মধ্যাহ্নভোজন সেরেছিলেন, বাঁকুড়ার চতুরডিহি গ্রামের বিভীষণ হাঁসদা’র বাড়িতে। সেই বিভীষণ হাঁসদা’কে নিয়ে রাজনীতিতে মেতেছে তৃণমূল ও বিজেপি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ফিরে যাবার পরের দিনই তৃণমূলের লোকজন বিভীষণের বাড়িতে পৌঁছে যায় চাল-ডাল সহ নানা খাদ্য সামগ্রী নিয়ে। দেওয়া হয় তাঁর ডায়াবেটিস আক্রান্ত, দ্বাদশ শ্রেণীতে পাঠরতা কন্যা রচনা হাঁসদা’র চিকিৎসার প্রতিশ্রুতিও। এদিকে, চিকিৎসার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় বিজেপির তরফেও। বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকার নিজে বিভীষণের বাড়িতে গিয়ে তাঁর মেয়েকে এইমসে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানোর কথা বলেন। এদিকে, তৃণমূলের তরফে সরকারি ওষুধ পত্র ও ইনসুলিন ইঞ্জেকশন পৌঁছে দেওয়া হয়। তবে, সেই ওষুধপত্র ও ইঞ্জেকশন বিশেষ কাজে লাগেনি বলে সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন স্বয়ং বিভীষণ হাঁসদা। অপরদিকে, বিজেপির দেওয়া প্রতিশ্রুতিও এখনও পূর্ণ হয়নি বলে জানিয়েছেন বিভীষণ।
গতকাল (২৪ নভেম্বর) বাঁকুড়ায় অনুষ্ঠিত প্রশাসনিক সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নতুন করে “বিভীষণ-রাজনীতি” উস্কে দিয়ে বলেন, “স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এসেছিলেন। ফাইভ স্টার হোটেল থেকে খাওয়ার আনিয়ে খেয়ে পালিয়েছেন, মেয়েটার চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছি আমরা।” এরপরই বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তরফে বিভীষণ হাঁসদা’র কাছে এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, “তৃণমূলের তরফে সরকারি ওষুধ পত্র ও ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়েছে। তবে, ওই ইঞ্জেকশন আমরা ব্যবহার করিনা। আমি যেহেতু সবসময় বাড়িতে থাকিনা, ওই সিরিঞ্জের মাধ্যমে ইঞ্জেকশন দেওয়া খুব অসুবিধা হয়, তাই আমরা পেনের মাধ্যমে ইঞ্জেকশন দেওয়া হয় যেটা সেটাই ব্যবহার করি। এটা ও নিজেই নিতে পারে।” এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য, দরিদ্র পরিবারের ক্লাস টুয়েলভের এই ছাত্রীকে, প্রতিদিনই ইনসুলিন নিতে হয়। এলাকায় ডাক্তারবাবু হিসেবে পরিচিত সাংসদ ডাঃ সুভাষ সরকারও সম্প্রতি এসেছিলেন বিভীষণের বাড়িতে। বলে গিয়েছেন, ওকে কেন্দ্রীয় সরকারের এইমস (AIMS) হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাবেন। এই বিষয়ে বিভীষণ বললেন, “ডাক্তারবাবু বলে গিয়েছেন, তবে এখনও তো কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।” এই বিষয়ে ডাঃ সরকার জানিয়েছেন, “মুখ্যমন্ত্রী তো জানেনই না ও কোন রোগে আক্রান্ত! আর, আমরা তো ওকে এইমসে নিয়ে যাবই।”
স্বভাবতই এই বিষয়ে বিরক্ত, রাজ্যের আপামর সাধারণ মানুষ তথা সচেতন নাগরিকেরা। তাঁদের মতে, “বিভীষণ কে নিয়ে রাজনীতি চলছে, কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।” প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, তিন বছর আগে শিলিগুড়ি মহকুমার নকশালবাড়িতে একটি আদিবাসী পরিবারে মধ্যাহ্নভোজ সেরেছিলেন অমিত শাহ। সেই পরিবারের পাশে গত তিন বছর ধরে বিজেপি-তৃণমূল কেউ না থাকলেও, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এবারের সফরের দিনই ওই প্রতিবেদনে গৃহবধূ গীতা মহালি’র হাতে চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেয় রাজ্য সরকার। আর, এসব দেখেশুনেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, “স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী খেয়ে যাওয়াতে, আর কিছু হোক বা না হোক, ওই পরিবারের দিকে অন্তত সমস্ত রাজনৈতিক দল বা রাজ্য সরকার ফিরে তাকাচ্ছে। কিন্তু, রাজ্যে এরকম কত শত অসহায় পরিবার আছে, তাদের কি হবে? তবে কি তাদের বাড়িতেও এবার পালা করে, বিরোধীদলের কোনো শীর্ষ নেতাকে খেতে যেতে হবে!” এই প্রশ্ন রাজ্যের আপামর সচেতন নাগরিকদেরও। আর, প্রশ্ন উঠবে নাই বা কেন, জ্বলন্ত প্রমাণ যে “গীতা” কিংবা “বিভীষণ” এর পরিবার।