দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, কলকাতা, ২৮ ফেব্রুয়ারি: বাম ব্রিগেড বরাবরই আবেগ-উচ্ছ্বাস-স্বতস্ফূর্ততা আর আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। তবে, এবারের ব্রিগেড সবদিক থেকেই একটু অন্যরকম ছিল। এই প্রথম বামেদের ব্রিগেডে উপস্থিত থাকল জাতীয় কংগ্রেস। সঙ্গে, আরেক জোটসঙ্গী আইএসএফ (ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট), সদ্য যাদের সঙ্গে সমঝোতা সম্পন্ন হয়েছে। শেষ পর্যন্ত দেখা গেল, নব্য জোটসঙ্গী আইএসএফ এর নেতা আব্বাস সিদ্দিকীই ব্রিগেডের ‘ম্যান অফ দ্য ম্যাচ’ হয়ে বেরিয়ে গেলেন। মঞ্চে ওঠা থেকে নেমে যাওয়া পর্যন্ত ব্রিগেড যেন আব্বাস’ময় হয়েই থাকল! এই ব্রিগেডে অনুপস্থিত ছিলেন, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। আবেগমথিত বার্তা দিয়েছিলেন গতকাল। স্বভাবতই, বাম সমর্থকরা কিছুটা মনখারাপ নিয়েই ব্রিগেডে পৌঁছেছিলেন। কিন্তু, ফিরে গেলেন নতুন এক অভিজ্ঞতা নিয়ে!

বরাবরের মতোই ব্রিগেড ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। যদিও, ভোটবাক্সে এবারও তার কতখানি প্রভাব পড়বে তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। কারণ, লালে লাল ব্রিগেডের সব রং কেড়ে নিয়ে চলে গেলেন এক পীরজাদা। নাম আব্বাস সিদ্দিকী। বামেরা ইতিমধ্যেই ৩০ টি আসন ছেড়ে দিয়েছে আব্বাসের আইএসএফ’কে। তবে, এখনও অধরা কংগ্রেসের সঙ্গে তাদের আসন সমঝোতার বিষয়টি। এই পরিস্থিতিতেই, ব্রিগেডের মঞ্চে যখন আব্বাস সিদ্দিকী উঠলেন, মঞ্চে তাকে জড়িয়ে ধরে অভিবাদন জানাতে ছুটে এলেন একের পর এক তাবড় বাম নেতা। কে নেই সেই দলে! মহঃ সেলিম, বিমান বসু থেকে সূর্যকান্ত মিশ্র। এমনকি, বক্তৃতারত অধীর চৌধুরী কেও থেমে যেতে হয়, আব্বাস ভক্তদের দাপটে! নীচে শুধু একটাই স্লোগান, “আমাদের গরম রক্ত, আমরা আব্বাসের ভক্ত!” তুমুল এই উচ্ছ্বাস থামানোর জন্য, সিপিআইএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহঃ সেলিম আব্বাস ‘ভাইজান’কেই কয়েক সেকেন্ডের জন্য মাইক ছেড়ে দিতে অনুরোধ করেন সাংসদ তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীকে। এখানেই যেন তাল কাটল কিছুটা! অধীর চৌধুরী বলেন, তিনি আর বক্তৃতা দিতে চান না! কিন্তু, শেষ পর্যন্ত বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর অনুরোধে পুনরায় বক্তৃতা চালিয়ে যান তিনি। ব্রিগেডের সমাবেশ শেষে অবশ্য সাংবাদিকদের অধীর চৌধুরী জানান, আব্বাসের যুবক ভক্তরা তাদের নেতাকে দেখে যেভাবে উচ্ছাস প্রকাশ করছিল, তাকে সম্মান জানিয়েই তিনি বক্তৃতা থামিয়ে দেন। অন্যদিকে, নিজের বক্তৃতায় আব্বাস সিদ্দিকী ধুয়ে দিলেন মোদী-মমতাকে। বামেদের সমর্থন করে জানিয়ে দেন, “জান লড়িয়ে দেব এই স্বাধীনতার যুদ্ধে!” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়র উদ্দেশ্যে বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যাকে জিরো করে দেব। আজকের এই ব্রিগেড দেখে সবথেকে আশাহত হবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর কোনও দাদাগিরি সহ্য করা হবেনা। ভিক্ষা নয় আমরা অধিকার বুঝে নিতে চাই।”


অন্যদিকে, ব্রিগেডের স্লগ ওভারে বা শেষ লগ্নে এবারও জুটি সেই মহঃ সেলিম, দেবলীনা হেমব্রম। মহঃ সেলিম তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যাওয়া নেতাদের কটাক্ষ করে বলেন, “সবই পুরানো মাল! কালীঘাটের গোডাউনে ছিল।” ব্রিগেড থেকেই অশোক-পলাশ-সিমুলের লাল বসন্ত শুরু হবে বলে তিনি জানিয়ে দেন। প্রতিবছর টেট, এস এস সি হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। আর, মোদী সরকার’কে কটাক্ষ করে বলেন, “সেদিন পার্লামেন্টে এক বিজেপি নেতা প্রশ্ন করলেন, ৭০ বছরে আপনারা কি করেছেন? পেছন থেকে এক কংগ্রেস সাংসদ বললেন, একদম কেউ বলবেনা। জানতে পারলেই ওরা সেটাও বিক্রি করে দেবে।” জোটের সুরও বেঁধে দিলেন সেলিম- “বাংলা বাঁচাতে ভরসা বিমান-অধীর-আব্বাস।” আর শেষ বক্তা ব্রিগেডের ‘আগুনপাখি’ দেবলীনা তৃণমূল কংগ্রেসকে ‘মেঠো ইঁদুর’ হিসেবে তুলে ধরে বললেন, “চাষীরা আজ ফসলের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন না। অঘ্রাণে ধান পাকে, ইঁদুর সেই ধান কাটে। তৃণমূল তেমনই।” কাটমানি প্রসঙ্গে দেবলীনার আক্রমণ, “ভোটে জিতলেই ফের কাটমানি নেওয়া শুরু করবে! বিধবা ভাতা, কৃষক ভাতা কেটে কেটে পকেটে ঢোকাবে।”









