মণিরাজ ঘোষ, মেদিনীপুর, ৭ মার্চ: মার্চের সাত তারিখ আজ। একেবারে ফাগুনের ভরা বসন্ত! তার মধ্যেই ‘জুন’ এসে পৌঁছল মেদিনীপুরে! হ্যাঁ, তৃণমূল কংগ্রেসের মেদিনীপুর বিধানসভার প্রার্থী অভিনেত্রী জুন মালিয়া। ‘বহিরাগত’ তকমা উড়িয়ে দিয়ে সমর্থকদের ভালোবাসায় ডুব দিলেন। শুরু হল পুষ্পবৃষ্টি! মেদিনীপুরে পা রেখেই, পৌঁছে গেলেন প্রয়াত বিধায়ক মৃগেন্দ্রনাথ মাইতি’র বাড়িতে। ছবিতে প্রণাম জানিয়ে শুরু করলেন প্রচারযাত্রা। আগামীকাল থেকেই শহরের পাটনা বাজারে ভাড়া নেওয়া ফ্ল্যাট বাড়িতে থাকবেন বলে জানা গেল।

মেদিনীপুরের গত দু’বারের বিধায়ক মৃগেন্দ্রনাথ মাইতি’র প্রয়াণের পর, সারা রাজ্যের নজর ছিল মেদিনীপুর বিধানসভার শাসক দলের প্রার্থী কে হয়, সেদিকে! অবশেষে, জনপ্রিয় অভিনেত্রী জুন মালিয়া’কেই বেছে নিয়েছেন দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রসঙ্গত, ২০১৪ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত মেদিনীপুরের সাংসদ ছিলেন অভিনেত্রী সন্ধ্যা রায়। যদিও, বয়স ও অসুস্থতা জনিত কারণেই ২০১৯ এ তাঁকে প্রার্থী করার ঝুঁকি নেননি তৃণমূল নেত্রী। ২০১৯ এ তৃণমূল প্রার্থী মানস রঞ্জন ভূঁইয়া কে হারিয়ে মেদিনীপুর লোকসভায় জয়ী হয়েছেন দিলীপ ঘোষ। শহরের রাজনীতি-সচেতন মানুষের যথেষ্ট ক্ষোভও ছিল অভিনেত্রী সাংসদ’কে নিয়ে। ক্ষোভের প্রথম ও প্রধান কারণ ছিল, তিনি ‘বহিরাগত’ হওয়ায় শহরবাসী তাঁকে বিপদে-আপদে পায়নি। তাই এবার শাসক দলের তরফে দাবি ছিল, বিধানসভায় ভূমিপুত্র প্রার্থী করতে হবে। কিন্তু, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণেই, সেই ঝুঁকি নেননি দলনেত্রী। ফের টলিউডের শিল্পীকেই বেছে নিয়েছেন প্রার্থী হিসেবে। অন্যদিকে, গতকাল (৬ মার্চ) বিজেপি তাদের প্রার্থী করেছে, ভূমিপুত্র শমিত দাস’কে। বাম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থীও ‘ভূমিপুত্র’ তরুণ কুমার ঘোষ (প্রাক্তন মন্ত্রী কামাখ্যা ঘোষের পুত্র)। তাই, অভিনেত্রী জুন মালিয়া’কে রাজনৈতিক লড়াইয়ের সাথে সাথে, ‘বহিরাগত’ তকমার সাথেও যে লড়াই করতে হবে তা বলাই বাহুল্য!

প্রয়াত বিধায়ক মৃগেন্দ্রনাথ মাইতি’র বাড়ি থেকে বেরিয়ে, জুন মালিয়া স্কুটারের পেছনে বসে পৌঁছে যান মেদিনীপুর শহর সভাপতি বিশ্বনাথ পান্ডবের বাড়িতে। সেখানেও, তাঁকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানানো হয়। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে জুন জানিয়ে দেন, “এত মানুষের ভিড়, আবেগ, উষ্ণতা দেখে আপনাদের কি মনে হচ্ছে আমি বহিরাগত!” সঙ্গে যোগ করলেন, “আমি অবিভক্ত মেদিনীপুরের মহিষাদল রাজবাড়ির মেয়ে।” ‘রাজনৈতিক মুখ’ নন, প্রশ্নের উত্তরে তিনি বললেন, “আমরা জন্মগতভাবে প্রত্যেকটি মানুষই রাজনৈতিক! তবে, আমার পরিবারের বাবা, ঠাকুরদা’ কংগ্রেসী রাজনীতি করেছেন। জনপ্রতিনিধিও হয়েছেন। তাই রাজনীতি আমার জিনে (DNA তে) আছে। তাছাড়া, আমি দিদির সাথে গত ১০ বছর ধরে আছি।” ‘ঘরের মেয়ে’ ওঠার আপ্রাণ চেষ্টার সাথে সাথেই, এদিন আত্মবিশ্বাসী কন্ঠে জুন মালিয়া জানিয়ে দিলেন, “বেশি কিছু বুঝিনা! আমরা জিতছি ব্যাস এটুকুই জানি, বুঝি। দিদি আবার মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন। বাংলা ও বাঙালির স্বার্থে দিদিকে মুখ্যমন্ত্রী করতেই হবে।”