দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, মেদিনীপুর, ১৪ সেপ্টেম্বর: করোনা আবহে এবার মেদিনীপুর পৌরসভার পরিষেবা নিয়ে ক্ষোভ দেখালেন শহরবাসী। শহরের অশোকনগর থেকে কর্ণেলগোলা, অরবিন্দনগর থেকে ধর্মা সর্বত্র একই অভিযোগ। দীর্ঘ সময় ধরে আসছেনা জঞ্জাল সংগ্রহের গাড়ি। জমে আছে আবর্জনার স্তূপ। অশোকনগরের লোকনাথ হার্ডওয়ার্সের গলি কিংবা রেনেসাঁ ক্লাব ও কর্পোরেশন ব্যাংকের পিছনে এলাকাগুলোতে গত তিন মাস ধরে জঞ্জাল সংগ্রহের গাড়ি না আসায়, কিছু জায়গায় জঞ্জালের স্তূপ পড়েছে বলে অভিযোগ করলেন, এলাকাবাসী। অশোকনগরের (৪ নং ওয়ার্ডের) স্থায়ী বাসিন্দা ৭০ বছরের রজত সাহা বললেন, “এই বয়সে প্রায় এক কিলোমিটার হেঁটে গিয়ে স্টেশনের কাছে জঞ্জাল বা বাড়ির নিত্যদিনের নোংরা-আবর্জনা ফেলে দিয়ে আসতে হয়। বিভিন্ন জায়গায় জানিয়েও কোনো কাজ হয়নি।” রেনেসাঁ ক্লাবের পিছনে বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকা, অধ্যাপিকা বৈশাখী মন্ডল সাহা বললেন, “ক্লাবের পেছনে রীতিমতো আবর্জনার স্তূপ হয়ে আছে তিন মাস ধরে। অনেক জায়গায় জানিয়েছি, কিন্তু, কাজ হয়নি।” একই অভিযোগ উঠে আসছে, জর্জকোট অরবিন্দনগর (২৩ নং ওয়ার্ড) থেকেও। যত্রতত্র আবর্জনা এবং সামান্য বৃষ্টিতেই জল জমে থাকার অভিযোগ করছেন, এলাকাবাসী।

অপরদিকে, মেদিনীপুর শহরের ৯ নং ওয়ার্ড কর্ণেলগোলায় আরো মারাত্মক অভিযোগ উঠল সোমবার। কর্ণেলগোলা এলাকায় যাঁরা করোনা সংক্রমিত হচ্ছেন, সেইসব বাসিন্দাদের বাড়ির কাছাকাছি আসছেনা পৌরসভার জঞ্জাল বা আবর্জনা সংগ্রহের গাড়িগুলি! কর্ণেলগোলার বাঘেরগলি’তে (ধর্মা লাগোয়া এলাকা) করোনা সংক্রমিত হয়েছিলেন, ঝাঁপা সীট নামে এক ব্যক্তি। তিনি সুস্থ হয়ে আয়ুশ থেকে ফিরে এসেছেন প্রায় এক সপ্তাহ হয়ে গেল। কিন্তু, এখনো সারা গলি জুড়ে আবর্জনা জমে আছে। পরিষ্কার বা আবর্জনা সংগ্রহ করতে আসেনি পৌরসভার লোকজন। তাঁর মেয়ে রিয়া সীট বললেন, “এমনিতেই এই গলিতে আবর্জনা পরিষ্কার হয় আলে কালে। আর, বাবা আক্রান্ত হওয়ার পর, ব্লিচিং পাউডার ছড়ানো, স্যানিটাইজেশন তো দূরের কথা, দু-তিন সপ্তাহ আবর্জনা পরিষ্কারই হয়নি!” এলাকার বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব বাবলু দাস বললেন, “এইতো দেখছেন বাড়ির কাছে আবর্জনা জমে আছে, দু-তিন সপ্তাহ ধরে।” প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, কর্ণেলগোলার বাসিন্দা প্রয়াত শিক্ষক (মেদিনীপুর কলেজিয়েট স্কুল) আশিস করের বাড়ির সামনেও এভাবে আবর্জনা জমে থাকায়, দিনকয়েক আগে বাসিন্দারা বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছিলেন। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর, স্থানীয় সমাজসেবী তথা শাসকদলের এক যুবনেতার উদ্যোগে তা কয়েকঘণ্টার মধ্যে পরিষ্কার করা হয়। ৯ নং ওয়ার্ডের আরেক সমাজসেবী তথা নাগরিক উন্নয়ন সমিতির সভাপতি অনয় মাইতি বললেন, “বিষয়টি নিয়ে আমি আগেও সরব হয়েছি। পৌরসভার প্রশাসকমন্ডলীর সদস্যদের কানেও তুলেছি। এই করোনা আবহে চারপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার পরিবর্তে, আবর্জনা জমে থাকাটা অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর। তাই, অবিলম্বে পৌরসভাকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আবেদন জানাবো।” এই বিষয়ে মেদিনীপুর পৌরসভার প্রশাসক তথা মহকুমাশাসক দীননারায়ণ ঘোষের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি, তিনি শহরের বাইরে থাকায়। তবে, পৌর প্রশাসক মন্ডলীর সদস্য নির্মাল্য চক্রবর্তী’র সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানিয়েছেন, “অবিলম্বে বিষয়গুলি খতিয়ে দেখে, উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছি।”


এদিকে, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের সেন্ট্রাল প্যাথলজির সামনে আজ রোগী বিক্ষোভে উত্তাল পরিস্থিতি তৈরি হয়। দিনকয়েক আগে করোনা সংক্রমিত হয়েছেন, মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের সেন্ট্রাল প্যাথলজির কয়েকজন কর্মী। যার জেরে আপাতত বন্ধ হয়ে গিয়েছে সমস্ত ধরনের রক্তের নমুনা সংগ্রহ। এর ফলে, চরম বিপাকে পড়েছেন রোগীরা। সোমবার পরিষেবা না পেয়ে কার্যত বিক্ষোভে ফেটে পড়লেন রোগীর পরিজনেরা। প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহের বুধবার থেকেই করোনা সংক্রমণের জেরে মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের সেন্ট্রাল প্যাথলজিতে রক্তের নমুনা সংগ্রহের প্রক্রিয়া বন্ধ ছিল। হাসপাতালের পক্ষ থেকে রীতিমতো নোটিস ঝুলিয়ে রক্ত পরীক্ষা করাতে আসা রোগীদের জানানো হয়েছিল সোমবার থেকে মিলবে নিরবিচ্ছিন্ন পরিষেবা। সেই মতো সোমবার সকাল থেকেই মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের সেন্ট্রাল প্যাথলজির সামনে ভিড় জমিয়েছিল রোগী ও রোগীর পরিজনেরা। তবে বেলা দশটার পরেও সেন্ট্রাল প্যাথলজির গেট না খোলায় ক্ষোভে ফেটে পড়েন রোগীর পরিজনেরা। উত্তেজনা সামলাতে ঘটনাস্থলে আসতে হয়, মেদিনীপুর কোতোয়ালি থানার পুলিশকে। পরে হাসপাতালের তরফে নতুন নির্দেশিকা ঝুলিয়ে জানানো হয়, মঙ্গলবার থেকেই শুরু করা হবে মেদিনীপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রক্তের নমুনা সংগ্রহের প্রক্রিয়া। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পুলিশের তরফে রোগীর পরিজনদের সাথে কথা বলে গোটা বিষয়টি বোঝানোর পরেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ মাধ্যমের কাছে কোনও রকম প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।






