দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, পশ্চিম মেদিনীপুর, ১১ মে: পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কোভিড গ্রাফ কিছুটা নিম্নমুখী হলেও, মারণ ভাইরাসের নির্মম আক্রমণ থেকে রেহাই পাচ্ছেন না করোনা সংক্রমিত ১ থেকে ২ শতাংশ মানুষ!প্রাণঘাতী সেই আক্রমণের শিকার আট থেকে আশি সকলেই। এমনকি দুধের শিশু’রাও (সংখ্যাটা নগন্য হলেও, প্রথম ঢেউয়ের তুলনায় অনেক বেশি)! এই দ্বিতীয় ঢেউ’কে সেজন্যই “বিপজ্জনক” বলছেন বিশেষজ্ঞরা। মেদিনীপুর শহরের এক অভিজ্ঞ চিকিৎসক যেমন বললেন, “এবারই দেখছি, কোভিডের হামলায় প্রাণ হারাচ্ছেন কোনোরকম কো-মর্বিডিটি না থাকা সুস্থ-সবল যুবকরাও!” মেদিনীপুর শহরের এক সুস্থ-সবল-মেধাবী যুবকের মর্মান্তিক মৃত্যু সেকথাই আবারও প্রমাণ করল! শহরের বক্সীবাজার এলাকার ২৬ বছরের যুবক মারণ ভাইরাসের নির্মম আক্রমণে মঙ্গলবার ভোর সাড়ে চারটা নাগাদ শালবনী করোনা হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। ছিলনা কোনো কো-মর্বিডিটি বা শারীরিক দুর্বলতা। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেল, গত ১ লা মে রিপোর্ট পজিটিভ আসে যুবকের। সেরকম কিছু অসুবিধা বা উপসর্গ না থাকায় বাড়িতেই ২ দিন ছিলেন, চিকিৎসকদের পরামর্শে ওষুধ পত্র খেয়ে। সামান্য শারীরিক অস্বস্তি অনুভব করায় গত ৪ ঠা মে শালবনী করোনা হাসপাতালে গিয়ে ভর্তি হন। প্রথম দিকে একেবারে সুস্থ ছিলেন এবং জেনারেল ওয়ার্ডেই ছিলেন ওই যুবক। পরে সামান্য শ্বাসকষ্ট অনুভব করায়, ৩-৪ দিন আগে তাঁকে HDU ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করা হয়। ক্রমেই শ্বাসকষ্ট এবং শরীরে অক্সিজেনের চাহিদা মারাত্মক হারে বৃদ্ধি পায়। তারপর ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়। কিন্তু, শেষ রক্ষা হয়না! মঙ্গলবার ভোর ৪ টা ১৫ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন অত্যন্ত মেধাবী এবং সদ্য চাকুরি জগতে (শিক্ষকতা) পা রাখা (Chemistry বিষয়ে M.SC & Be.Ed) এই যুবক! হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, তাঁরাও এই ঘটনায় বাকরুদ্ধ। যখন ওই যুবক হাসপাতালে ভর্তি হন, তখনও তাঁরা ভাবেননি এরকম পরিণতি হতে পারে। দায়িত্বে থাকা এক চিকিৎসক জানালেন, “হাসিখুশি ওই যুবকের সাথে আমাদেরও বন্ধুত্ব হয়ে গিয়েছিল। হঠাৎ করেই অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। আমরা সবরকম ভাবে চেষ্টা করেও কিছু করতে পারলাম না! কোভিডের এই মারণ উপসর্গ এমনই ভয়াবহভাবে রেসপিরেটরি সিস্টেমের উপর আক্রমণ করছে, কোনোভাবেই কিছু করা যাচ্ছে না! অথচ অনেক বয়স্ক, অসুস্থ বা কো-মর্বিডিটি থাকা ব্যক্তিদের আমরা সুস্থ করে বাড়ি পাঠাচ্ছি। HDU এবং CCU মিলিয়ে সবসময় চিকিৎসাধীন ৫০-৬০ জন সঙ্কটজনক রোগীদের মধ্যে মাঝেমধ্যে ১-২ জনের ক্ষেত্রে এরকম ঘটে যাচ্ছে, যেখানে আমরাও অসহায়!” এই ঘটনায় শোকস্তব্ধ যুবকের পরিবার ও বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয় পরিজনেরা।


Whatsapp Group এ

এদিকে, শালবনী করোনা হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন কেন্দ্রীয় বাহিনীর (CRPF) একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমান্ড্যান্ট সুস্থ হয়ে, শালবনীর ক্যাম্পে ফিরে যান মঙ্গলবার। তার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বা হার্ট ফেইলিওর হয়! হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ দিন ধরে চিকিৎসাধীন ওই কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানের RT-PCR রিপোর্ট নেগেটিভ আসে সোমবার রাতে। তিনি শুধু করোনা মুক্ত নন, একেবারে সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন। হাসতে হাসতে হাসপাতাল থেকে ক্যাম্পের উদ্দেশ্যে রওনা দেন মধ্যবয়স্ক ওই আধিকারিক। দুপুর ২ টো – আড়াইটা নাগাদ ফিরে যান, আর তার কয়েক ঘন্টার মধ্যেই যখন ফিরিয়ে আনা হয়, তখন প্রায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে ফেলেছেন। ভেন্টিলেশনে নিয়ে যাওয়ার আগেই তাঁর মৃত্যু হয়। জানা গেছে, হাসপাতাল থেকে ফিরে যাওয়ার এক-দু’ ঘন্টার মধ্যেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। বুকে ব্যাথা অনুভব করেন এবং কয়েক মিনিটের মধ্যেই হার্ট অ্যাটাক হয়। হাসপাতালে ফিরিয়ে আনা হলেও, শেষ রক্ষা হয়নি! এই ঘটনাতে শোকের ছায়া কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের মধ্যে।








