দ্য বেঙ্গল পোস্ট প্রতিবেদন, মেদিনীপুর, ১৫ অক্টোবর: করোনা অতিমারী’র বিরুদ্ধে যারা নিজেদের প্রাণ আর পরিবারের মায়া পরিত্যাগ করে নিজেদের সমর্পণ করেছে, এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে প্রতিমুহূর্তে যারা করোনা সংক্রমিতদের পরিষেবায় নিযুক্ত থেকে যোদ্ধার মতো লড়াই করে চলেছে, তাদের উপরই যখন অজ্ঞ, অর্বাচীন, অসচেতন আর অবিবেচক প্রতিবশীরা অন্যায়ভাবে আক্রমণ করে, সেই সমাজের একজন প্রতিনিধি হিসেবে লজ্জায় মাথা হেঁট হয় সকলেরই! মেদিনীপুর শহরের উপকণ্ঠে, পাথরা (মেদিনীপুর সদর ব্লক)’র কাছাকাছি কুলদা গ্রামে আজ এমনই ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটল। মেদিনীপুর শহরের উপকণ্ঠে আয়ুশ হাসপাতালে কর্মরত ৩ জন করোনা যোদ্ধা (এজেন্সি’র অধীনে থাকা সাফাই কর্মীরা) যখন আজ (১৫ অক্টোবর), বিকেলে কয়েকদিনের ছুটি নিয়ে গ্রামে পৌঁছয়, তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে কয়েকজন প্রতিবেশী। সূত্রের খবর অনুযায়ী, প্রথমে তাদের গ্রামে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। কিন্তু, সাত্তার, নাজিরুদ্দিন ও শেখ সাহাজুদ্দিন নামে ওই তিন করোনা যোদ্ধা এর প্রতিবাদ করে। এরপরই, শুরু হয় কিল, চড়, ঘুঁষি! বাধা দিতে এলে সাত্তারের মা ষাটোর্ধ্বা হালিমা বিবি’র উপরও আক্রমণ করা হয়। চারজনই গুরতর ভাবে আহত হন। চারজনকেই সন্ধ্যা ৬.৩০টা – ৭টা নাগাদ মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। একজনের (নাজিরুদ্দিনের) অবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে জানা গেছে।
ওই ৩ জন করোনা যোদ্ধার পরিজনেরা জানালেন, এর আগেও এই নিয়ে কয়েক জন গ্রামবাসী অশান্তি করেছে। ওদের হুমকি দেওয়া হয়েছিল, যেন গ্রামে না আসে! করোনা হাসপাতালে কাজ করলে, গ্রামে ঢোকা যাবে না এমনই ফতোয়া জারি করে ওরা! এই নিয়ে অনেক বোঝানোও হয়েছে। আজ, বিকেলে ওরা বাড়ি ফিরলেই, ওদের পথ আটকানো হয়। ওরা প্রতিবাদ করে। সামান্য তর্কাতর্কি শুরু হতেই, বেধড়ক মারধর করা হয় তিনজনকেই। প্রশাসনকে জানানো হয়েছে ইতিমধ্যে। জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গেল, এই খবর পাওয়ার পরই পুলিশ’কে জানানো হয়েছে। ইতিমধ্যেই অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলেও জানা গেছে! কিন্তু, প্রশ্ন উঠছে, আর কতদিন এভাবে করোনা যোদ্ধারা এই কঠিন পরিস্থিতিতে পরিষেবা দিতে গিয়ে লাঞ্ছিত, অপমানিত কিংবা প্রহৃত হবেন! প্রশাসনের এত সচেতনতা তবে কি বিফলেই যাবে কিছু অর্বাচীনদের জন্য! যারা নিজেরাই জানেনা, এই ভাইরাস তাদের বা তাদের আত্মীয়-স্বজনদের শরীরেও যেকোনো দিন, যেকোনো মুহূর্তে প্রবেশ করতে পারে, তখন তাদের যদি পরিষেবা না দেওয়া হয়, তবে কি হবে! না কি সেটাই তাদের উচিৎ শাস্তি হবে? প্রশ্ন সচেতন মেদিনীপুরবাসীর।